নড়াইলে মেহেদির রঙে রঙিন শিশুরা, সেই সঙ্গে পেলো ঈদ উপহার

1
1
নড়াইলে মেহেদির রঙে রঙিন শিশুরা, সেই সঙ্গে পেলো ঈদ উপহার
নড়াইলে মেহেদির রঙে রঙিন শিশুরা, সেই সঙ্গে পেলো ঈদ উপহার

ফরহাদ খান

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। তবে এবারও বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে ঈদ আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়েছে। আর সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য এবারের ঈদুল ফিতর আরো কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়ে। সেই সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে একটু হাসি ফুটিয়েছেন কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দিয়েছেন নতুন পোশাক। মেহেদির রঙে রঙিন করেছে শিশুদের হাত। এছাড়া সেমাই ও মিষ্টিমুখ করিয়েছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের। পেয়েছে ঈদ সেলামিও। সব মিলে আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে বেদে পল্লীর সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা।

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের সদস্যরা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। নড়াইল সদরের হবখালী ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা এলাকায় ভাসমান বেদে পল্লীর সুবিধাবঞ্চিত ২৪ জন শিশুকে নতুন পোশাক দিয়েছেন তারা। শিশুদের পছন্দ ও রুচিমাফিক পোশাক কিনে ঈদের দিনে তাদের গায়ে তা পরিয়ে দিয়েছেন ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। সেই সঙ্গে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের হাতে এঁকে দেয়া হয়েছে মেহেদির দৃষ্টিনন্দন নকশা। এছাড়া বাসা থেকে রান্না করা সেমাই এবং মিষ্টিমুখ করিয়ে তাদের মন আরও হাসি-খুশিতে ভরিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া প্রতিটি শিশুকে ২০টাকা করে ঈদ সেলামি দেয়া হয়েছে। নতুন পোশাকসহ ঈদ উপহার পেয়ে ভীষণ খুশি ভাসমান বেদে পল্লীর শিশুরা। আনন্দ আবেগে আপ্লুত অভিভাবকেরা।

শিশু আরবিনা, সানাই, আখিরুল, বাঁধন, ফারজিরুল, সহিরুল, সুমাইয়া, জুঁইসহ অন্যরা বলে, নতুন পোশাক পেয়ে অনেক খুশি আমরা। আগে আমাদের এমন ঈদ উপহার কেউ দেয়নি। এক সঙ্গে নতুন পোশাক, মেহেদি ও ঈদ সেলামি পেয়েছি। সেই সঙ্গে সেমাই ও মিষ্টি খেয়েছি। অনেক মজা পেয়েছি আমরা।
ভাসমান বেদে পল্লীর সরদার ওয়াসিম মিয়া বলেন, দেশের অনেক অঞ্চলে আমরা ঘুরে-ফিরে বেড়াই। কেউ কোনো খোঁজখবর নেয় না আমাদের। নড়াইলে এসে আমরা অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের সদস্যরা রমজানের মাঝামাঝি আমাদের প্রতিটি পরিবারকে চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ, রসুনসহ খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে। ঈদের দু’দিন আগে এবং ঈদের দিনে আমাদের ছেলে-মেয়েদের নতুন কাপড়সহ ঈদ উপহার দিয়েছে। করোনার কঠিন সময়ে ঈদ উপহার পেয়ে আমরা অনেক খুশি।

স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মির্জা গালিব সতেজ বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরে একাধিক পোশাক না কিনে বিলাসিতা এড়িয়ে এবং একজন পোশাক দোকানির সহযোগিতায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে একটু হাসি ফোটানোর চেষ্টা করেছি আমরা। এছাড়া ২০১৭ সাল থেকে পড়ালেখার টাকা জমিয়ে এবং পরিবার-পরিজনের সহযোগিতায় ছিন্নমূল শিশু ও অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি আমরা। গত বছর দেশে করোনা ভাইরাসের প্রকপ বৃদ্ধির পর থেকেই জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ কর্মহীন অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে অবিরাম কাজ করছি। গত বছর করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ ৫০০ শতাধিক পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছে। এছাড়া গরিব কৃষকের ধান কর্তন, বিনামূল্যে সবজি বাজার চালু, মেডিকেল সেবা, ইফতার সামগ্রী, ঈদে ছিন্নমূল শিশুদের মাঝে নতুন পোশাক বিতরণসহ বিভিন্ন ইতিবাচক কাজ করে যাচ্ছি আমরা। ফাউন্ডেশনের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৭জন। এছাড়া কয়েকজন উপদেষ্টা আছেন। আমরা আজীবন মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই। এছাড়া দেশের বিত্তবানসহ তরুণ প্রজন্ম সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে থাকবেন, এ প্রত্যাশা আমাদের।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের সদস্যরা বেদেপল্লীসহ সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া করোনা মোকাবেলায়ও তাদের ভূমিকা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনকে ইতোমধ্যে মাস্ক, সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও ৩ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। তাদের কাজকে আরো গতিশীল করতে আমাদের সুদৃষ্টি থাকবে।