নড়াইলের ক্লিনিকগুলো প্রসূ/তি মায়ের মৃত্যুফাঁ/দ!

0
56
নড়াইলের ক্লিনিকগুলো প্রসূ/তি মায়ের মৃত্যুফাঁ/দ!
নড়াইলের ক্লিনিকগুলো প্রসূ/তি মায়ের মৃত্যুফাঁ/দ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার আটলিয়া গ্রামের ২৯ বছরের ঝুমা বেগম। সদ্যজাত সন্তানকে আদর তো দূরে, কোলে নেবার সামর্থ ও নেই। জরায়ূ /কে/টে নিজের অনি/শ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে চ/র/ম দু/শ্চিন্তায় বাবার বাড়ির বিছানায় শুয়ে অঝোরে কাঁ/দ/ছেন। নিজের ভবিষৎ দাম্পত্য জীবনের দু/শ্চিন্তায় আর ৩য় দফা অপা/রেশ/ন করতে হবে এই শংকায় দিন কা/টছে। ঝুমা বেগমের সাথে কথা বলতে গেলে তার মুখ দিয়ে স্বর বের না হয়ে দুচোখ বেয়ে অ/শ্রু গড়িয়ে পড়লো। কা/ন্না জড়িত কণ্ঠে জানান, আমি কোনদিন মা হতে পারবো না, কোনদিন উঠে দাঁড়াতে পারবো কিনা তাও জানিনা। আমাকে আগের অবস্থায় কি ফিরিয়ে দিতে পারবেন ডাক্তার আকরাম? আমি ডাক্তারকে ডাকলাম কিন্তু উনি ফ্লাইটের তাড়া থাকায় আমাকে একটিবারও দেখলেন না।

নড়াইলের ক্লিনিকগুলো প্রসূ/তি মায়েদের জন্য মৃত্যুফাঁ/দ। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অ/পচিকিৎসায় ভূ/ক্তভো/গীরা প্রতিকার চেয়ে পাবেন না এই আশং/কায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপোষ মিমাংশা করেন। বছরের পর বছর ধরে অদ/ক্ষ আর অনুন্ন/ত চিকিৎসা ব্যবস্থা চলছেও অদৃশ্য কারণে ক্লিনিকগুলোর ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন, ক্ষ/ম/তার জো/রে পার পেয়ে যান ক্লিনিক মালিকেরা।

নড়াইল শহরের ভওয়াখালী গ্রামের খন্দকার মাহফুজ নুর। সন্তানস/ম্ভাবা স্ত্রী ঝুমাকে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ভর্তি করেন শহরের ইমন ক্লিনিকে। অ/পারে/শনে বাচ্চা প্র/সবের পর থেকে রো/গীর য/ন্ত্রণা শুরু হয়, এরপর প্রসা/বের রাস্তা দিয়ে বের হতে থাকে র/ক্তধা/রা। এই অবস্থায় চিকিৎসা না দিয়েই জো/র করে ক্লিনিক থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়। ২৪ ডিসেম্বর আ/ল্ট্রাাসনো করে পে/টের ভিতরে জমাট বাধা র/ক্ত দেখা যায়। স্ত্রীকে বাঁ/চাতে খুলনার একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে জানতে পারেন ঝুমার পে/টের ভিতরে প/চন ধরায় জরা/য়ু, প্র/সাবেন না/লী কে/টে ফেলতে হবে। জরুরী ভিত্তিতে ২য় দফা অ/পা/রেশন করা হয় ঝুমার। কয়েক দফায় ৪ লক্ষ টাকা খরচ করলেও স্ত্রী ঝুমা রয়েছেন আশং/কাজনক অবস্থায়। প্রতিকার চেয়ে ক্লিনিকের দুই মালিক আর চিকিৎসকের বিরু/দ্ধে ২৫ জানুয়ারী আদালতে মামলা করেছেন।

ডিসেম্বর মাসে ইমন ক্লিনিকে ভওয়াখালির মৌসুমী খানম এর সিজার অ/পারেশনের ৫দিন পর সেলা/ই কা/টতে গিয়ে দেখা গেল কোন সে/লাই লাগেনি। সন্তান প্র/সবের পর তার তলপে/টে য/ন্ত্রণা বাড়তে থাকে। ক্লিনিকে অভিযো/গ জানালে ক্লিনিকের লোকেরা এসে কয়েক ডোজ ব্য/থার ই/নজে?কশন দিয়ে পরে আবার কেটে তলপে/ট সে/লাই করেন। স্বামী তিতাসের অভিযোগ, ইমন ক্লিনিক সহ অনেক ক্লিনিকে কমদামী সুতা ব্যবহার হয়, কোথাও ডাক্তার নাই এমনকি নার্সও নাই, সম্পূর্ন খামখেয়ালীতে চলছে চিকিৎসা।

ইমন ক্লিনিকে মা হতে এসে আরো করু/ন অবস্থা হয়েছে দিঘলিয়ার সুজয় ঘোষের স্ত্রী সুপ্রিতী ঘোষ এর। অ/পা/রেশন হবার পরে তার শরী/রে ইন/জেক/শন পু/শ করে একজন আয়া, যে ই/নজে/কশন ধীরে ধীরে অর্ধেক অ্যাম্পুল শরী/রের পু/শ করার কথা আয়া ঐ ইন/জেকশ/ন পুরোটাই একবারে শরী/রে পু/শ করেন। এতে সুপ্রিতী ঘোষ এর মু/খে ফেনা উঠে ম/রম/র অবস্থা হলে জরু/রীভাবে তাকে খুলনার একটি বেসরকারী হাসপাতালের আই/সিইউ তে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে কয়েকদিন থাকার পর ধীরে ধীরে সুস্থ্য হলেও আ/শংকা কাটেনি ঐ নারীর।

সুজয় ঘোষের অভিযোগ, ইমন ক্লিনিকে কোন ডিপ্লোমা নার্স নেই, আয়ারাই নার্স। ক্লিনিক মালিকের স্ত্রী নার্স না হয়েও অ/পারে/শন থিয়েটারে থাকেন। পারিবারিক সব কাজই চলে অ/পা/রেশন থিয়েটারে। নিজেদের ডিসপে/ন্সারী থেকে ঔ/ষধ বিক্রি আর রো/গীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করলেও এখানে সেবার বদলে বা/জে চিকিৎসা পাওয়া যায়। ৩ বছর আগে একই রকমভাবে ইমন ক্লিনিকে মা হতে এসে আজো য/ন্ত্রণায় ভুগছেন চাচুড়ি গ্রামের ৩০ বছরের সুমনা বেগম।

সরেজমিন ইমন ক্লিনিকে ঘুরে কোন প্রশিক্ষত নার্স পাওয়া গেল না, কয়েকজন আয়াকে নার্স সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ক্লিনিক মালিকের স্ত্রী শিল্পি বেগম দ্রুত প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে ছুটে আসেন। অ/পারে/শন থিয়েটারের মধ্যে পর্দা দিয়ে আ/ড়াল করে অন্যান্য আসবাপত্র রাখা হয়েছে। প্রত্যেকটি রো/গীর প্রেসক্রিপশনে ২০/২২ টি করে ঔ/ষধ লেখা আছে। কয়েকমাস হলো বেসরকারী একটি কলেজ থেকে সদ্য পাশ করা একজন আবাসিক চিকিৎসক থাকলেও তার রুমের সামনে কোন নেমপ্লেট দেখা গেল না। মালিক সরোয়ার হোসেন এরপরই নীচ থেকে দোতলায় আসেন। কিছুটা হম্বিতম্বি করার চেষ্টা করলেও পরে থেমে যান। কয়েকজন সাংবাদিককে ফোন করেন ক্লিনিকে আসার জন্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বললেন, রাত হলে ক্লিনিকের ৪ তলায় নারী এবং অন্য আসর বসে।

অ/পা/রেশ থিয়েটারে নিজের সবসময় থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের ক্লিনিক তো তাই রো/গীর ভালম/ন্দ দেখার জন্য ক্লিনিকে থাকি। অভিযোগ আছে অ/পারে/শন চলাকালীন শি/শু সন্তানকে তিনি অ/পারে/শন থিয়েটারের মধ্যে ভাতও খাওয়ান, যদিও এসব অভিযো/গ অ/স্বীকার করেন তিনি।

আবাসিক চিকিৎসক ডা.সপ্নীল আকাশ চিকিৎসার নানা সম/স্যা বিষয়ে নিজেদের দায় স্বীকার করে বললেন, সবসময়তো এ ধরনের ঘটনা ঘটে না এটা অনেকটাই অ/নাকাংক্ষিত। ক্লিনিক মালিক সরোয়ার হোসেন একটি মাত্র ভুল চিকিৎসার কথা স্বীকার করলেও বাকিগুলো রো/গীদের উপর দা/য় চা/পিয়ে বলেন, রো/গীরা অসচেতন ভাবে চলাফেরার কারণে ভোগে, আবার প্রে/সার বেড়েও অসু/স্থ্য হতে পারে। এসবই নির্ভর করে উপরওয়ালার উপর।

ডিভাইন ক্লিনিক মালিক ডা.শামীম আক্তার বলেন, একটি ক্লিনিকে সার্বক্ষনিক চিকিৎসক এবং নার্স আব্যশক থাকতে হবে। কোন কোন ক্লিনিকের চিকিৎসার গা/ফিলতির জন্য আমাদের সব ক্লিনিকের যেমন দুর্না/ম হয় তেমনি প্রসূ/তি মায়েরা দীর্ঘ রো/গে ভোগেন। বেসরকারী ক্লিনিকও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এসেসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক এস এম সাজ্জাদ রহমান বলেন, আমরা নিয়মিত মাসিক মিটিং করি, ক্লিনিকগুলোর কোন দু/র্বলতা থাকলে সেগুলো সংশোধনের জন্য বলা হয়।

শুধু ইমন ক্লিনিকই নয়, নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চলা মর্ডান সা/র্জিক্যাল ক্লিনিক, লোহাগড়ার মা সা/র্জিক্যাল ক্লিনিক, আল ইসলামিয়া ক্লিনিক, মোর্শেদা ক্লিনিক, মিজানুর নার্সিং হোম। ক্লিনিকের নিয়ম না মানা কালিয়ার কালিয়া সার্জিক্যাল ক্লিনিক। এছাড়া শ/হীদ মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক ক্লিনিক আর বড়দিয়ার হাজী খান রওশন আলী হাসপাতাল লাইসেন্স ছাড়াই গত ৩ বছর ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় বর্তমানে ৬০টি ক্লিনিক ও ডায়াগ/নষ্টিক সেন্টার এর বেশিরভাগই লাইসেন্স হালনাগাদ নাই। ৪টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন, ৯টি লাইসেন্সবিহীন ডায়া/গনষ্টিক সেন্টার বহাল তবিয়তে চালু রয়েছে। এই অবস্থায় নতুন আরো ৪টি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করেছে।

নড়াইলের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহীতা ফোরামের আহবায়ক কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে নড়াইলে অ/বৈ/ধ ক্লিনিক ব্যবসা চলছে, সি এস সাহেবরা এসেই দুই মাসের মধ্যে ঠিক করে ফেলবেন বলেন কিন্তু কোন কারণে কিছুই করেন না ঠিক বোঝা যায় না।

নড়াইলের সিভিল সা/র্জন ডা. নাসিমা আকতার গতানুগতিক ধারায় বললেন, লাইসেন্স না থাকলে সেই ক্লিনিক গুলো আমরা বন্ধ করে দেব। মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কয়েকটি মামলা এসছে এগুলো আমরা তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেব।