বিইউবিটিতে পালিত হলো মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

8
22
বিইউবিটিতে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
বিইউবিটিতে পালিত হলো মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

এমএসএ

আজ রবিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। আজ ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছরও পূর্ণ হলো। দিনটি পালন  উপলক্ষে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির আয়োজনে (বিইউবিটি) শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কোরআন পাঠ এবং আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে একুশের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের “ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে হলে” আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ডঃ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বিইউবিটি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডঃ সফিক আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিইউবিটির উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ ফৈয়াজ খান। আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিইউবিটির কলা ও মানবিক অনুষদের ডীন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ারুল হক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক মোঃ সাব্বির আহমেদ।

অধ্যাপক ডঃ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে জানান যে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বাড়িতে উর্দু বলতেন না। নিজের আবাসস্থলে তিনি ইংরেজি ব্যবহার করতেন। তিনি শিক্ষিত হয়ে বাংলায় এসে কেন বললেন উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা? উর্দুকে ইসলাম ও মুসলমানদের ভাষা মনে করা হতো। উর্দু আর আরবী এক ভাষা নয়। রাজনীতির স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করেছিলেন জিন্নাহ।

বাংলার ইতিহাস নিয়ে বক্তা দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে এখনো ইতিহাসে দু’টি কথা লেখা হয় নি- এক, বাঙালির বীরত্ব, অপরটি হলো বাঙালির অহংকার। ডঃ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন আরো উল্লেখ করেন, “বাংলার ইতিহাস বা বাঙালির ইতিহাস নতুন করে লিখতে হবে। আমাদের ইতিহাসবিদরা ইতিহাস উপহার দিয়েছেন মজ্জাহীন ভাবে। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ চেতনা নয়, মুক্তিযুদ্ধ একটা ব্যবসা, মুক্তিযুদ্ধ একটা রাজনীতি। ভাষা আন্দোলন ছিল বহুমাত্রিক আন্দোলন, বাঙালির জেগে ওঠার আন্দোলন, সাংস্কৃতিক স্বতন্ত্র গড়ে ওঠার আন্দোলন, ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন।” বক্তব্যে ভাষা আন্দোলনে ভাষা সৈনিকদের অবদান তুলে ধরার দাবি জানান তিনি। বক্তা আরো বলেন, “আমার কাছে ২১ মানে হলো মাথা নত না করা। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবে না বাঙালি।”

“এত বছর পরেও বাংলার যত্ন, সংরক্ষণ আমরা করতে পারিনি। আজ কত অনুষ্ঠান হবে তবে কাল আমরা ভুলে যাবো।” বাংলার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, “বাংলার কথ্য ভাষা, লেখ্য ভাষা ত্রুটি পূর্ণ।সাধু-চলিতের মিশ্রণ তো আছেই। পরবর্তীতে বলতে কোন ব্যবহার নেই, শুদ্ধ ব্যবহার হলো- পরবর্তী সময়ে বা কালে। প্রখ্যাত লেখকেরা এই ভুল ব্যবহার করে যাচ্ছেন। অনেক ভ্রান্তি রয়ে গেছে। শুদ্ধতার প্রয়োজন আছে। বাংলা সুমিষ্ট ভাষা, বলতে না পারার জন্যই এটি কদর্য হয়ে গেছে।”

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু’র ভূমিকা প্রসঙ্গে ডঃ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অনেক কথা বলা হচ্ছে একটা কথা বলা হয় নি। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ভাষণে বলেছিলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলবো আমি বাঙ্গালি, বাংলা আমার ভাষা’।” বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তৎপরতা ও সক্রিয়রা ব্যক্ত করেন তিনি।

আলোচনা সভা নিরলস পরিশ্রম দিয়ে সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য আয়োজক সহ সকলকে ধন্যবাদ জানান অনুষ্ঠানের সভাপতি বিইউবিটির উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ ফৈয়াজ খান। সভাপতি দুটি প্রশ্ন উত্থাপন করেন- “আমরা কেন প্রভাতফেরীর পরিবর্তে প্রথম প্রহর এবং ৮ ফাল্গুনের স্থলে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করে থাকি?” তিনি আরো বলেন, একুশের চেতনা আমাদের বুকে ধারণ করতে হবে। প্রশ্নের উত্তরে ডঃ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন প্রথম প্রহর পালনে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি এই আচরণকে পশ্চিমা প্রথা জানিয়ে প্রতিবাদ ব্যক্ত করেন। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রচলন নিয়ে তিনি বলেন, “আব্দুল গাফফারের লেখা গানটির (‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি…’) সাথে জাতির আবেগ জড়িয়ে আছে। এজন্য হয়তো বা আমরা ৮ ফাল্গুনের স্থলে একুশে ফেব্রুয়ারিকে গ্রহণ করে নিয়েছি।”

আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিইউবিটি ট্রাস্টের সদস্যগণ, শিক্ষকমণ্ডলী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। অনুষ্ঠানে রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।