৪ বছর অতিবাহিত, নড়াইলে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কাজ শুরু হয়নি

6
51

স্টাফ রিপোর্টার

একনেকে অনুমোদনের ৪ বছর অতিবাহিত হলেও শুধুমাত্র জায়গার অভাবে নড়াইলে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কাজ শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, জায়গা সংক্রান্ত অনেক জটিলতার কারণে কলেজের কাজ শুরু করতে দেরী হচ্ছে। তবে আগামি জুলাই মাসের মাঝামাঝি জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হতে পারে। একই সাথে পাশ হওয়া দেশের খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও নওগা জেলায় এ প্রকল্পের প্রযুক্তি কলেজগুলির কাজ চলমান থাকলেও নড়াইলে এখনও জমি অধিগ্রহণ সম্ভব না হওয়ায় নড়াইলের সচেতন মহল হতাশা প্রকাশ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মাণের জন্য ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে একনেকে ৩শ ৬৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২১-২২ অর্থ বছওে এটির কাজ শেষ হবার কথা। জেলা প্রশাসন কলেজটির জন্য নড়াইল-লোহাগড়া সড়ক সংলগ্ন মালিবাগ এলাকায় সীমাখালী ও বোড়াবাদুরিয়া মৌজায় ৮একর জমি নির্ধারন করলেও স্থানীয় জমির মালিকরা এখানে কলেজ নির্মাণের বিরো*ধিতা শুরু করলে কাজটি পিছিয়ে। শহরের অন্য কোনো প্রান্তে ভালো জায়গা না পাওয়ায় সর্বশেষ এখানেই কলেজটি নির্মাণের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।

নড়াইল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল হক জানান, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে একনেকে এ কলেজটি অনুমোদন দেওয়া হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কলেজটির নাম দেন ‘প্রকৌশলী খান হাতেম আলী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। জমি অধিগ্রহণে দেরী হওয়ায় এ কলেজটির কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে জমি অধিগ্রহনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ৪কোটি ৬৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। জুলাই মাসের মধ্যে জেলা প্রশাসনের দপ্তর থেকে অধিগ্রহনকৃত জমি বুঝে পাব বলে আশা করছি। এর পর পর্যায়ক্রমে টেন্ডার এবং কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হবে। তিনি জানান, একই সাথে অনুমোদন হওয়া দেশের অন্য ৪টি জেলায় প্রযুক্তি কলেজগুলির নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

জানা গেছে, এখানে কাজরে মধ্যে পূর্ত (অবকাঠামো) এবং ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ২শ ৬৫ কোটি টাকা। ক্লাস রুম ও অফিস কক্ষের চেয়ার-টেবিল,আসবাবপত্র,হোষ্টেল ফার্নিচার, ডেকোরেশন, ল্যাবরেটরি, গাড়ী ইত্যাদিতে ব্যয় হবে ১শ কোটি টাকা।

প্রথমাবস্থায় এখানে নির্মিত হবে বহুতল বিশিষ্ট প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন, প্রত্যেকটি ৫শ সিটের ২টি ছাত্র-ছাত্রী হোষ্টেল, একাধিক ল্যাবরেটরি, মসজিদ, প্রিন্সিপ্যাল ও ষ্টাফ কোয়ার্র্টার, অভ্যন্তরীন রাস্তা ও সিমানা প্রাচীর ইত্যাদি।। প্রথমাবস্থায় এখানে ৪টি বিভাগ নিয়ে কলেজটি চালু চচ্ছে। বিভাগগুলি হলো সিভিল, ম্যাকানিক্যাল, ইলেকট্রিক এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিয়ারিং এবং সফট্ওয়ার ইঞ্জিয়ারিং।

জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী নড়াইল শহরের বরাশোলা এলাকার কৃতি সন্তান হাতেম আলী খানের নামে এ প্রযুক্তি কলেজটির নামকরণ করা হয়েছে। তিনি ১৯৬৮ সালে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। তাঁর দু’পূত্র পূত্র বাংলাদেশের কমিউ’নিষ্ট আন্দোলনের অন্যতম প্রবাদ পুরুষ তাত্ত্বিক বুদ্ধিজীবী বর্তমানে সিপিবির পলিটব্যরো সদস্য অসংখ্য গ্রন্থের লেখক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হায়দার আকবর খান রনো এবং দেশের অন্যতম কমিউনিষ্ট নেতা বুদ্ধিজীবী বর্তমানে ‘বাংলাদেশ কিউবা মৈত্রী সমিতির সহ-সভাপতি এবং গণ সংস্কৃতি কেন্দ্রের চেয়ারম্যান হায়দার আনোয়ার খান জুনো। তাঁদের নানা ছিলেন, নড়াইলের মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা উপ-মহাদেশের বিখ্যাত রাজনীতিক সৈয়দ নওশের আলী।

জানা যায়, ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ দেশের ৬ষ্ট তম প্রাচীন। ১৮৫৭ সালে প্রতিষ্ঠত নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল দেশের অন্যতম প্রাচীন একটি স্কুল। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের অন্যমত প্রাচীন শিবশংকর বালিকা বিদ্যালয়। শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে এগিয়ে থাকা নড়াইলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ। নড়াইলে এ ইঞ্জিনিয়ারি কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হলে কিছুটা হলেও জেলাবাসীর দাবি পূরণ হবে।

জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, নড়াইল-২ আসনের মাননীয় এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার এবং জেলা প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজটির জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমাবস্থায় জমি নিয়ে কিছু জটিলতা ছিল। এখন আর সে সমস্যা নেই। জমির মালিকদের ৭ ধারা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামি ১ মাসের মধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হবে এবং পর্যায়ক্রমে কলেজের কাজ এগিয়ে যাবে।