নড়াইলের লোহাগড়ায় খোলা আকাশের নিচে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাঠদান

4
129
নড়াইলের লোহাগড়ায় খোলা আকাশের নিচে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাঠদান
নড়াইলের লোহাগড়ায় খোলা আকাশের নিচে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাঠদান

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের ভদ্রডাঙ্গা বাতাসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রায় ৬০বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিদ্যালয়ের নুতন ভবন নির্মাণের জন্য একমাত্র পুরাতন ঘরটি গত বছর মে মাসে ভেঙ্গে ফেলা হয়। তখন থেকে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হচ্ছে। ভবন নির্মাণের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি। নয় মাসে নতুন ভবন তৈরির কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও তা হয়নি। সবেমাত্র বিদ্যালয়ের ভীত ঢালাই হয়েছে।

১৯৫০সালে স্থানীয় সাত গ্রামের মানুষ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে।ওই বিদ্যালয়টি গত আট মাস ধরে ক্লাস হচ্ছে বিদ্যালয় চত্ত্বরে খোলা আকাশের নিচে। এতে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে সার্বিকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। স্থানীয় এলাকাবাসী ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগে জানা যায়, ঠিকাদারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও গাফিলতির জন্য যথাসময় এ বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। সে কারণে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ রক্ষার্থে দ্রুত এ নুতন ভবন নির্মাণ করা একান্ত দরকার।

এলজিইডির চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নতুন এ ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। চারতলা ভিত্তির এ ভবনটি বর্তমানে হবে পাঁচ কক্ষের একতলা ভবন। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৭৬ টাকা। কার্যাদেশ দেয়া হয় গত বছর ৪ এপ্রিল। এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ ছিল ৩জানুয়ারি। নড়াইলের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এস এম আলমগীর কবির এ প্রকল্পের ঠিকাদার। তবে নতুন ভবন নির্মাণে কেন দেরি হচ্ছে, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা কোন সন্তোষ জনক জবাব দিতে পারেননি।

সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা যায়, শিক্ষাথীদের ক্লাস নেয়ার জন্য একটি টিনশেড ঘর তৈরি করতে ওই প্রকল্পের বরাদ্দের মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা ধরা আছে। ঠিকাদার সেটি করেননি। বরাদ্দের টাকা দিয়ে ওই ঘরটি তৈরি করে দিলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ অনেকাংশ কমে যেতো। পুরাতন টিনশেড ঘরের জরাজীর্ণ টিন খুলে তা দিয়ে ছাপড়া দেয়া হয়েছে। মুল ঠিকাদার কাজটি লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়ার ঠিকাদার কামরুজ্জামানের নিকট বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই ঠিকাদারের যথা সময়ে অনেক প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না করার অতীত বদনাম রয়েছে। তাই এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ভবন নির্মাণ কাজের কোন অগ্রগতি হয়নি। গত ছয় মাস যাবত এ কাজ একদমই বন্ধ ছিল।গত নভেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও তার তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আছরা খাতুন বলেন, ‘শিশু শ্রেণির জন্য আলাদা সজ্জিত শ্রেণিকক্ষ রাখার নির্দেশনা আছে। তবে সেটি হচ্ছে না। খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও পরীক্ষায় মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষার প্রতি কোমলমতি শিশুদের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’

এ বিষয় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাব্বি, রাখি, চন্দ্রাবতী, অমিত, অনন্যা, মল্লিকা, রিয়াদ, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নূপুর, দিদার, বিল্লাল, হালিমা, পিয়াস ও শয়নের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানায়,‘মাঝেমধ্যে সামান্য বাতাসে ধুলাবালুতে চোখ-মুখ ভরে যায়। এছাড়াও বইখাতা উড়ে যায়।মাটিতে নিচু হয়ে লেখা যায় না। স্কুলে আসতে মন চায়না। তারপরও অভিভাকদের চাপে বাধ্য হয়ে স্কুলে যেতে হয়।’

ঠিকাদারের নিয়োজিত ব্যবস্থাপক পলাশ মোল্যা বলেন, ‘গত বছর মে মাসে বিদ্যলয়ের ভবনটি ভিতঢালাই দেয়ার জন্য মাটি খুড়া হয়। বর্ষায় কাঁচা রাস্তা দিয়ে মালামালও আনা সম্ভব হয়নি। তাই কাজ শুরু করা যায়নি।’

উপজেলা প্রকৌশলী অভিজিৎ মজুমদার বলেন,‘গত বর্ষায় মৌসুমে কাজ করা যায়নি। এ ছাড়া কাজটি মূল ঠিকাদার বিক্রি করে দিয়েছে অন্য ঠিকাদারের কাছে। এসব কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে মূল কাঠামো নির্মাণ হয়ে যাবে।’