নড়াইলের লোহাগড়ায় এতিম এসএসসি পরীক্ষার্থীকে স্কুল থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত

5
193

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলের লোহাগড়ায় এসএসসি পরীক্ষার্থী এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান আবু সাইদকে শিক্ষকের সাথে বে’য়াদবির অভিযোগে তাকে ব’হিস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল পরিচালনা পরিষদ। তবে সাইদ ও তার মা এবং অনেকের অভিযোগ স্কুলের শিক্ষক আতিয়ার রহমান সাইদকে বেদম মা’রধ’র করেও ক্ষান্ত হয়নি। তাকে এখন স্কুল থেকে ব’হিস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) লোহাগড়া উপজেলার চাচই মাধ্যমিক বিদ্যলয় পরিচালনা পরিষদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার চাচই-ধানাইড় গ্রামের দরিদ্র মৃত মনি মিয়া ঠাকাুরের ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী আবু সাইদ গত মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এসএসসি-এর নির্বাচনী পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা দিচ্ছিল। পরীক্ষা শুরু পর ওই হলে ডিউটিরত অংকের শিক্ষক আতিয়ার রহমান ওই ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করে তুমি নিজের সিটে না বসে অন্য সিটে বসেছ কেন? এ নিয়ে ওই ছাত্রের সাথে শিক্ষকের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ওই ছাত্র শিক্ষকের সাথে বে’য়াদবি করলে শিক্ষক তাকে মা’রধ’র করে। এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার স্কুল পরিচালনা পরিষদের এক সভায় ওই ছাত্রকে ব’হিস্কারের সিদ্ধান্ত হয়।

স্কুল পরিচালনা পরিষদের সদস্য জাহিদুর রহমান বলেন, শুনেছি এসএসসি পরীক্ষার্থী আবু সাইদ এক শিক্ষকের সাথে অ’সৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। এ অপরাধে ওই শিক্ষক সাইদকে বে’ধড়ক মা’রধ’র করেছে। বৃহস্পতিবার সাইদকে নিয়ে ওই শিক্ষকের কাছে যাই এবং সাইদ ক্ষমা প্রার্থনা করেছে।

আবু সাইদের মা দরিদ্র শহিদা বেগম বলেন, অন্যের জমিতে বা বাড়িতে কাজ করে আবার রাজমিস্ত্রির শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চালাই। আমার সন্তান আবু সাইদও রাজমিস্ত্রির কাজ করে লেখাপড়া করে। আমার ছেলে স্যারদের সাথে বে’য়াদবি করতে পারে। তাই বলে একজন শিক্ষক ছেলেকে মা’রবে ! ছেলের নাক-মুখ দিয়ে র’ক্ত পড়েছে। গায়ের জামা ছি’ড়ে গেছে। এ জন্য সে মাপও চেয়েছে। ছেলেকে স্কুল থেকে ব’হিস্কার করলে এখন সে যাবে কোথায়?

অভিযুক্ত শিক্ষক আতিয়ার রহমান বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ওই ছাত্র নিজের সিটে না বসে অন্য সিটে বসেছিল। এ সময় তাকে নিজের সিটে বসতে বলেলে সে ডিউটিরত এক শিক্ষকের সাথে বে’য়াদবিমূলক আচরণ করে। পরে আমি তাকে একটা চ’ড় দিলে আমার ওপর চড়াও হয়। তাকে কোনো মা’রধর করা হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ কারণে তাকে ব’হিস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এখনও রেজুলেশন করা হয়নি। এখন সে যদি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও স্কুল পরিচালনা কমিটির কাছে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে তাকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে। স্কুল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খায়ের মোল্যা বলেন, ওই ছাত্র শিক্ষককে মে’রেছে এবং বে’য়াদবি করেছে। তাই মিটিং-এ তাকে ব’হিস্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি ঘটনার দিন ঢাকায় ছিলাম। শিক্ষকদের কাছে শুনেছি, গত মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষার দিন ওই ছাত্র নিজের সিটে না বসে অন্য সিটে বসেছিল। পরীক্ষায় ডিউটিরত শিক্ষক আতিয়ার রহমান ওই ছাত্রকে নিজের সিটে বসতে বলায় শিক্ষকের সাথে বে’য়াদবি করে এবং শিক্ষকের গা’য়ে হা’ত দেয়। সে অপরাধে তাকে বৃহস্পতিবার স্কুল পরিচালনা কমিটির সভায় বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এখনও রেজুলেশন করা হয়নি। আতিয়ার রহমান ওই ছাত্রকে মা’রধ’র করেনি বলে মন্তব্য করেন।

জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ ছায়েদুর রহমান বলেন, সামনে এসএসসি পরীক্ষা। বোর্ডে তার রেজিষ্ট্রেশন করা হয়ে গেছে। এখন তাকে টিসি দিলে সে কোথায় যাবে? তার ছাত্রত্ব ন’ষ্ট করার অধিকার কারও নেই। এছাড়া তাকে টিসি দিলে বোর্ডের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি দেখছেন বলে জানান।