নড়াইল সদর হাসপাতালে সেবার মান বাড়লেও কমেনি দালালদের প্রভাব

0
21
শিশুর মৃ'ত্যু
নড়াইল সদর হাসপাতাল

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইল সদর হাসপাতালে গত চারমাসের ব্যবধানে সেবার মান বৃদ্ধি পেলেও দালালদের দৌরাত্ম কমেনি। সাংসদ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার সরাসরি তত্বাবধায়নে এক’শ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল এখন সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার পরিবেশ গড়ে উঠেছে। পাল্টে গেছে হাসপাতালের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও রোগীদের খাবারের মানও। হাসপাতাল ক্যাম্পাসে প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্সের দেখা মেলে না। নেই কোন কোনপাট ও যানজট। আগের মতো তেমন কোন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের তেমন ভিড়ও দেখা যায় না। কিন্তু হাসপাতাল এখনও দালালের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হতে পারেনি।

উল্লেখ্য, গত ২৫ এপ্রিল সদর আধুনিক হাসপাতাল পরিদর্শন করেন নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। হাসপাতালে যতটুকু রিসোর্স রয়েছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। একইসাথে তিনি হাসপাতালে কোন দালাল, বহিরাগত কোন প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্স অবস্থান করতে পারবে না বলেও কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

সম্প্রতি সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মো: আব্দুস শাকুর তাঁর অফিস কক্ষে কর্মরত সকল চিকিৎসকদের নিয়ে হাসপাতালের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন ।

মতবিনিময় সভায় কনসালট্যান্ট ডা: অনিতা সাহা, জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা: মো: ইয়ানুর রহমান, জুনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিষ্ট ডা: কাজী মো: রবিউল আলম, জুনয়ির কনসালট্যান্ট ডা. এম এম আব্দুর রশিদ, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারী) ডা: মো: আহাদ আলী মহলদার, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিও) ডা. মো: মোশফেক-উর রহমান, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আ. ফ. ম মুশিউর রহমান বাবু, মেডিকেল অফিসার সুজল কুমার বকশী, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থো) ডা: আব্দুর রহমান, মেডিকেল অফিসার ডা. আলিমুজ্জামান সেতু, মেডিকেল অফিসার ডা: সুব্রত কুমার, মেডিকেল অফিসার ডা: রোকসানা বিনতে আকবর, ডেন্টাল সার্জন ডা: আফিকুর রহমান সৌরভ, প্যাথলজিষ্ট ডা: বিভাষ কুমার শর্মা, মেডিকেল অফিসার (ইউনানী) ডা: মো: শাহীন আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা: মো: আকরাম হোসেন, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (ইএনটি) ডা: মো: নূর কুতুবুল আলম, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনী) ডা: মৃদুলা কর, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথোসিয়া) ডা: এ এইচ এম শাহিনুর রহমান, মেডিকেল অফিসার ডা: এ এস এম সায়েমসহ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিতি ছিলেন আমেরিকা প্রবাসী মো: লিযাকত হোসেন, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী হাফিজুর রহমান, সমাজকর্মী রাসেল বিল্লাহ প্রমুখ।

তত্বাবধায়ক মো: আব্দুস শাকুর জানান, এক’শ বেডের হাসপাতালে আউটডোরে প্রতিদিন রোগী দেখা হচ্ছে দুই হাজারের মত। এছাড়া ১ম শয্যার হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকে ২৫০ এরও বেশি। কিন্তু সরকারিভাবে খাবার ব্যবস্থা আছে মাত্র ১০০ জন রোগীর। বাকি ভর্তি চিকিৎসাধীন রোগীর খাবার ব্যবস্থা হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়ার কোন সুগোগ নেই।

এছাড়া এক’শ বেডের এ হাসপাতালে জন্য সরকার যে ঔ*ষধ বরাদ্দ দিয়েছে, তা দিয়ে সকল রোগীদের সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঔ*ষধ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা জরুরী। পাশাপাশি হাসপাতালে একটি আল্ট্রাসোনোগ্রাম মেশিন ছিলো তা বিগত ৩/৪ মাস আগে থেকে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। মেরামতের জন্য কয়েকবার লেখালেখি হয়েছে, কিন্তু এখনো কোন ফলাফল হয়নি। দ্রুত হাসপাতালে একটি নতুন আল্ট্রোসোনোগ্রাম মেশিন প্রয়োজন।

হাসপাতালের দালালের দৌরাত্ম ও প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. মো: আব্দুস শাকুর বলেন, এ হাসপাতালে ২/৩ জন আউটসোসিং কর্মী স্থানীয় প্রভাবশালীদের অজুহাত দেখিয়ে রোগীদের বাইরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার অভিযোগ রয়েছে এবং তাদের আচরণও ভালো না এমনও অভিযোগ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো জানান, হাসপাতাল ক্যাম্পাসে বহিরাগত কয়েকজন দালালদের উৎপাতও রয়েছে। এসব ঠেকাতে স্থানীয় সচেতন মানুষ ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডাদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। হাসপাতালের সেবার মানন্নোয়নের লক্ষ্যে তিনি স্থানীয় সচেতন মহলের পরামর্শ কামনা করেন।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আ. ফ. ম মুশিউর রহমান বাবু জানান, হাসপাতালে অনেক মালামাল ব্যবহার অনুপোযোগি হয়ে হাসপাতালের অনেক জায়গা দখল করে রেখেছে। যার ফলে হাসপাতালে ভেতরে ও বাইরে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে অসুবিধা হচ্ছে। বিষয়টি এমপি মহোদয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

অপরদিকে আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী লাইনে দাড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হিমসিম খায়। আর এ সুযোগে দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। গ্রামগঞ্জ থেকে আসা সাধারণ রোগীরা ভদ্রবেসি দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রোগীর প্রচণ্ড ভিড়ে দালালদের কেউ কেউ চিকিৎসকের দোহায় দিয়ে বকসিস হিসেবে ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে রোগিদের অভিযোগ রয়েছে।