‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিয়ো ভাই’- আজ জাতীয় কবি নজরুলের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী

3
14

ডেস্ক/এসএস

আজ মঙ্গলবার, ১২ ভাদ্র জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা ১৩৮৩ সনের আজকের এই দিনে শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম। কবির জীবনাবসান হয়। ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিয়ো ভাই’-কবির এ ইচ্ছা স্মরণে রেখে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়।

জাতীয় কবির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার বাদ ফজর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদুল জামিয়া’য় কোরানখানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৭টায় কলাভবনের অপরাজেয় বাংলার প্রাঙ্গনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ একত্রিত হন। সেখান থেকে তাঁরা সকাল সোয়া ৭টায় শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে গমন, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর কবির সমাধি প্রাঙ্গণে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা ও সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন নজরুল গবেষক ও জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৫ মে ১৮৯৯) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন কাজী ফকির আহমদ। তিনি ছিলেন মসজিদের ইমাম ও মাযারের খাদেম। নজরুলের মাতার নাম জায়েদা খাতুন। ১৯০৮ সালে মাত্র নয় বছর বয়সে তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন। নজরুলের ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। জীবিকা অর্জনের জন্য মাত্র ১০ বছর বয়সেই তাঁকে কাজে নামতে হয়। প্রাথমিক জীবনে তিনি ছিলেন কবরের সেবক ও মসজিদের মুয়াজ্জিন। একই সাথে মক্তব থেকে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং উক্ত মক্তবেই শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি।

বাল্যকালে একটি লেটো যোগদেন নজরুল। লেটো ছিল রাঢ় অঞ্চলের দলের একট নাট্যদল। লেটো দল থেকেই তার অভিনয় এবং সাহিত্য চর্চা শুরু হয়। ১৯১০ সালে লেটো ছেড়ে ছাত্রজীবনে ফিরে আসেন।

১৯১৪ সালে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি করে দেন। ১৯১৫ সালে তিনি আবার রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে ফিরে গিয়ে সেখানে অষ্টম শ্রেণী থেকে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে মাধ্যমিকের প্রিটেস্ট পরীক্ষার না দিয়ে তিনি সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। ১৯২০ সাল থেকে তিনি সাংবাদিকতা ও সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন।

১৯২২ সালের ১২ আগস্ট “ধূমকেতু” প্রকাশ করেন নজরুল। ধূমকেতুর একটি সংখ্যায় তাঁর ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ প্রকাশিত হলে সংখ্যাটিকে নিষিদ্ধ করা হয়। ২৩ নভেম্বর নজরুলের প্রবন্ধগ্রন্থ যুগবাণী বাজেয়াপ্ত হয় এবং একই দিনে গ্রেপ্তার হন তিনি।

১৯৪২ সালের জুলাই থেকে ১৯৭৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত কবির এক অসহনীয় নির্বাক জীবন পার করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের মে মাসের ২৪ তারিখে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্বপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশে তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডিতে কবির বসবাসের জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন যা এখন নজরুল ইনিস্টিটিউট। ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ (১২ ভাদ্র ১৩৮৩) ঢাকার পিজি হাসপাতালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের উত্তর পার্শ্বে সমাহিত করা হয়।