মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী অধ্যক্ষ সিরাজ

2
27

নিউজ ডেস্ক

গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি মাদ্রাসায় পরীক্ষা দিতে গেলে তাঁর গায়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। দগ্ধ নুসরাতকে সেদিন রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করতে থাকেন নুসরাত। পরিশেষে গত বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

নুসরাতের এই মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য কে দায়ী? নুসরাত হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) শনিবার (১৩ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ড মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নির্দেশে ঘটেছে।

পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নির্দেশে নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। নুসরাতকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য, ২৭ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তার মেয়ের প্রতি যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা। পিবিআইয়ের প্রধান আরো বলেন, গত ৪ এপ্রিল আসামি নুর উদ্দীন ও শাহাদাৎসহ কয়েকজন কারাগারে গিয়ে সিরাজ উদ দৌলার সঙ্গে দেখা করেন। তখন নুসরাতকে কিছু একটা করার নির্দেশনা দেন সিরাজ উদ দৌলা। এরপর ৫ এপ্রিল সকালে নূর উদ্দিনসহ কয়েকজন মিলিত হয়ে নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার শেষ পরিকল্পনা করে।

পিবিআই জানিয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী শম্পা নামের এক ছাত্রীর ওপর ৩টি বোরকা ও কেরোসিন আনার দায়িত্ব পড়ে। ওই ছাত্রী কথা মতো সকাল ৯টায় কেরোসিন ও বোরকা নিয়ে শাহাদাতকে দেয়। সকাল ৯টার পর ওই মাদ্রাসার ভবনের ছাদে চারজন অবস্থান করতে থাকে। এদিকে শম্পা নুসরাতকে গিয়ে বলে যে তার সহপাঠী নিশাতকে ভবনের ছাদে মারধর করা হচ্ছে। ওই খবরে নুসরাত ছাদে গেলে তাকে আটকে দেয়া হয়। এরপর তাকে প্রথমে ওড়না দিয়ে বেঁধে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়। মাদ্রাসার বাইরে নুর উদ্দিনের নেতৃত্বে ৪ বা ৫ জন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ও গেট পাহারা দেয়। নুসরাতকে আগুন দেবার পর সেখান থেকে বোরকা পরে বের হয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

এদিকে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের এজাহারভুক্ত আট আসামীর মধ্যে পরিকল্পনাকারী শাহাদাৎ হোসেন শামীম (২০), নূর উদ্দিন (২০), কাউন্সিলর মাকসুদ আলম (৪৫), জোবায়ের আহমেদ (২০), জাবেদ হোসেন (১৯) ও আফসার উদ্দিনকে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। একই ঘটনায় আগে শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেফতার সিরাজ উদ দৌলাকে নুসরাত হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এজাহারভুক্ত অপর আসামী হাফেজ আব্দুল কাদের পলাতক রয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত খুনিরা ছাড় পাবে না। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুনিদের কয়েকজন ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে। অন্যরাও দ্রুত গ্রেফতার হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করতে না পারে।’