তিন বছরের হাহাকার আমার মনের মধ্যেঃ জাহালম

4
14

নিউজ ডেস্ক

তিন বছর যাবৎ কারাগারে বন্দী ছিলেন টাঙ্গাইলের নির্দোষ জাহালম (৩২)। দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) দায়ের করা ২৭টি মামলার ভুল আসামি ছিলেন তিনি। সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কে‌ন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে মুক্তি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।

রবিবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জাহালমকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় ভুল আসামি সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তৎক্ষনাৎ তার মুক্তির নির্দেশ দেন।

জেল থেকে বের হয়েই জাহালম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিন বছর পর বের হয়ে আমার খুব ভালো লাগছে। দুদক মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে জেলে আটকে রেখেছে। আমি দুদকের বিচার চাই। আমি কখনো ভাবতে পারি নাই আমি কোনদিন বের হতে পারবো।’ এসময় মানবধিকার সংস্থা, সংবাদপত্র প্রথম আলো, ও চ্যানেল ২৪ এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

জেলের ভেতরের দিনগুলো প্রসঙ্গে জাহালম বলেন, ‘জেলে অনেক কষ্টে দিন কেটেছে আমার, মানুষের কাপড় ধুয়ে, ওয়ার্ডের সেবা করে, অন্যান্য কাজ করে ক’টা ভালো খাইছি।’

ক্ষতিপূরণের দাবি করে জাহালম বলেন, ‘তিন বছরে আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষতিপূরণ চাই।’

আদালতে মিথ্যা প্রমাণের সাথে কোনভাবেই পেরে ওঠেনি জাহালম। দিনগুলোর স্মৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমি জজ সাহেবকে বলেছিলাম, আমি এই মামলার আসামী না। আমি আবু সালেক না, আমি জাহালম। কিন্তু তিনি আমার কথা বিশ্বাস করেননি। জজ সাহেব ছবি মিলিয়ে বলেছিলেন আমিই সালেক। সাক্ষীরাও মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছিল, আমি সেই লোক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই মিথ্যা সাক্ষ্যের বিরুদ্ধে আমি বিচার চাই’। হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে মুক্তি পেয়ে আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জাহালম।

পরিবারের কথা উঠলে জাহালম বলেন, ‘তাদের বুকে জড়িয়ে না ধরলে আমার আত্মা শান্তি পাবে না। তিন বছরের হাহাকার আমার মনের মধ্যে। তিন বছর আমার মায়ের সাথে দেখা হয় না। স্ত্রী-সন্তানের কথা খুব মনে পড়তো। কিন্তু কান্না ছাড়া আমার কিছুই করার ছিল না।’

মুক্তির পর দুদকের যেসব কর্মকর্তার কারণে বিনা অপরাধে জেল খেটেছেন তাদের বিচার দাবি করেন তিনি। এছাড়া সঠিক তদন্ত ছাড়া কাউকে যেন কেউ গ্রেপ্তার না হয় তারও দাবি জানান তিনি।

জাহালমের কারা মু‌ক্তির বিষয়‌টি নি‌শ্চিত করে কাশিমপুর কে‌ন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, জাহালমকে আদালতের নির্দেশে কারাগার থেকে মু‌ক্তি দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের ২৭ মে থেকে এ কারাগারে ব‌ন্দি ছিলেন তিনি।

কারাফটকের সামনে জাহালমকে পেয়ে বড়ভাই শাহানুর মিয়া তাকে জড়িয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে যান। কেঁদে বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্ট যে আমার ভাইকে মুক্তি দিয়েছে আমি হাইকোর্টকে ধন্যবাদ জানাই। মি‌ডিয়ার সহযো‌গিতার কথা উল্লেখ করেন তিনি। আমরা পা‌রিবা‌রিক, সামা‌জিক ও আ‌র্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষ‌তিগ্রস্ত হয়ে‌ছি। এ ক্ষ‌তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। যাদের কারণে আমার ভাইকে বিনা অপরাধে জেল খাটতে হয়েছে তাদের সবার বিচার চাই।’ এরপর জাহালমকে সাথে নিয়ে নিজ বাড়ি ফেরেন ভাই শাহানুর মিয়া।

উল্লেখ্য, সোনালী ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকার অভিযোগে ঠাকুরগাঁও এর আবু সালেকের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এঘটনায় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নরসিংদী ঘোড়াশাল পাটকলের শ্রমিক জাহালমকে গ্রেপ্তার করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। ভুল আসামী জাহালম তখন থেকেই কারাগারে আছেন। পরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্তে বেরিয়ে আসে আবু সালেকের পরিবর্তে জাহালমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ নজরে আনে হাইকোর্ট।