নড়াইলের লোকসাহিত্য- লোকগল্পঃ ‘কাঠুরিয়া’

240
132

এক কাঠুরিয়ার স্ত্রী পরকিয়া করে সামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রেমিকের সঙ্গে পরামর্শ করে। পরদিন কাঠুরিয়াকে দুপুরে খাবার হিসেবে চাল ও গুড়ের তৈরি নাড়ু দেয় ১২টা। জঙ্গলে কাঠ কাটতে কাটতে হঠাৎ কাঠুরিয়া দেখে একদল ডাকাত আসছে। ভয়ে কাঠুরিয়া কুড়াল নিয়ে গাছে উঠে গামছা দিয়ে গাছের সঙ্গে নিজেকে বেঁধে রাখে। ডাকারত দল ঐ গাছের তলায় হাজির হয়ে লুন্ঠিত মালামাল রেখে পুটলিতে বাঁধা ১২টি নাড়ু দেখতে পায় কিন্তু আশেপাশে কোন লোকজন দেখতে পায়না, ক্ষুধার্ত ডাকাতদল নাড়ুগুলি খেয়ে নেয়। নাড়ু খেয়ে ডাকাতদের মৃত্যু হয়। হঠাৎ একটা হিংস্র বাঘ গাছতলায় মানুষ দেখে আক্রমণ করে। বাঘের হুঙ্গকারে ভয়ে কাঠুরিয়ার হাতের কুঠার পড়ে বাঘের মাথার উপর এবং বাঘ মারা যায়। কাঠুরিয়া নিচে নেমে লুন্ঠিত ধনরত্ন নিয়ে বাড়ি ফেরে। এদিকে কাঠুরিয়ার স্ত্রী নিশ্চিন্তে প্রেমিকের সঙ্গে মত্ত থাকে। এ অবস্থায় কাঠুরিয়া বাড়িতে ফিরে স্ত্রীকে ডেকে বলে-

হোচেনের মা হোচেনকে খেতে দিয়েছ তো (হোচেন হলো ধারালো শিংওয়ালা ষাঁড়)।

স্বামীর আগমনে প্রেমিকাস কাঠুরিয়ার স্ত্রী ভীত সন্ত্রস্ত হয়। প্রেমিকা পেছনের বেড়ার উপর দিয়ে লাফিয়ে পড়ে এবং ষাঁড় (এড়ে গরু) এর শিং এর উপর পড়ে পেটে শিং ঢুকে যায় ও মরণ চিৎকার করে। লোকজন হাজির হয়ে জানতে চায় কি হয়েছে। কাঠুরিয়া ধাঁধার ছড়ায় জবাব দিয়ে বলেনঃ

“কপালে থাকিলে বিদ্যা পথে মেলে সোনা,
যবের ছাতুর নাড়ু খেয়ে মরলো বার জনা,
হাতের তে পড়িলো কুঠার মরলো বনের বাঘ,
বাড়ির হোচোন মারলো ডোচোন ঘুচলো মনের রাগ।”

তথ্যনির্দেশঃ খলিলুর রহমান, তারাপুর, নড়াইল।
সূত্রঃ বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমেলা