যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে স্থগিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ

43
25

নিউজ ডেস্ক

আজ শুক্রবার রাতে পুণরায় শুরু করা হবে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ সময় গত রাত ১টা ৩৭ মিনিটে দেশের প্রথম এ যোগাযোগ উপগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে অরবিটাল স্লটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর কথা ছিল। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে (স্ট্যান্ডার্ড গ্রাউন্ড সিস্টেম অটো অ্যাবোর্ট) এর উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয়।

বাসসের বরাত ধরে জানা যায়, শুক্রবার স্পেসএক্স এক টুইটার বার্তায় জানিয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে (স্ট্যান্ডার্ড গ্রাউন্ড সিস্টেম অটো অ্যাবোর্ট) উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ স্থল থেকে নামানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় এই স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষ করতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, উৎক্ষেপণের শেষ মুহূর্তটিও সম্পূর্ণ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ছিল। এক্ষেত্রে যে কোন পরিমাপ অস্বাভাবিক হলে উৎক্ষেপণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। জয় বলেনে, ‘উৎক্ষেপণের মাত্র ৪২ সেকেন্ড আগে আজ এটির উৎক্ষেপণ বাধাগ্রস্ত হয়। স্পেসএক্স সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কাল একই সময়ে আবারো স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের প্রচেষ্টা চালাবে। তিনি জানান, রকেট উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এক্ষেত্রে আপনি কোন ঝুঁকি নিতে পারেন না।’

এদিকে স্পেসএক্স তাদের টুইটার বার্তায় জানিয়েছে, রকেট ও স্যাটেলাইট সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে এবং এটি উৎক্ষেপণে নিয়োজিত দল বাংলাদেশ সময় ১২ মে (শনিবার) রাত ২ টা ১৪ মিনিট উপগ্রহটি আবারো উৎক্ষেপণে কাজ করে যাচ্ছে।

স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটে করে কেপ ক্যানাভেরাল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে এ স্যাটেলাইটটি মহাকাশে যাত্রা করবে।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে প্রেরণের মধ্যদিয়ে যোগাযোগ উপগ্রহ উৎক্ষেপণকারী ৫৭তম দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান (বিটিআরসি) ড. শাহজাহান মাহমুদ এরআগে বলেন, ফ্যালকন-৯ রকেট ৩.৭ টন ওজনের স্যাটেলাইটটিকে উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে মহাকাশে নিয়ে যাবে।

এ উৎক্ষেপণ দু’টি পর্যায়ে সম্পন্ন হবে। প্রথম পর্যায়ে লঞ্চ অ্যান্ড আর্লি অরবিট ফেজ (এলইওপি) এবং দ্বিতীয় পর্যায় হলো স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন।

২০১৫ সালে ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এছাড়া উপগ্রহ নির্মাণে একই বছরের নভেম্বরে ফ্রান্সের থ্যালাস অ্যালেনিয়া কোম্পানির সঙ্গে ২৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে। স্যাটেলাইটের জন্য মোট ব্যয় ২,৯৬৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে ঋণ হিসেবে ১,৫৮৫ কোটি টাকা সরবরাহ করছে এইচএসবিসি।

যদিও বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট বিদেশ থেকে ক্রয় করা হয়েছে এবং এটি উৎক্ষেপণও বিদেশ থেকেই করা হচ্ছে, তবে দেশ থেকেই এই স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ইতোমধ্যেই স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুরে এবং রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় একটি করে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু-১ এর ফলে ডাইরেক্ট-টু-হো (ডিটিএইচ- বিশ্বব্যাপী টেলিভিশন বিনোদনের জগতে দ্রুত গতির সেবা), ভিডিও সার্ভিস, ই-লার্নিং, টেলি-মেডিসিন, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি খাতসহ দুর্যোগ উদ্ধারে ভয়েস সার্ভিসের জন্য সেলুলার নেটওয়ার্কের কার্যক্রম এবং এসসিএডিএ, এওএইচও-এর ডাটা সার্ভিসের পাশাপাশি বিজনেস-টু-বিজনেস (ভিসেট) পরিচালনায় আরো সহজতর করবে।

স্যাটেলাইটে নিজস্ব ভিস্যাট থাকবে যার মাধ্যমে ব্যাংক ও অন্যান্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভয়েস, ডাটা ও ইন্টারনেট সেবা নিতে পারবে। এছাড়া প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট ও টেলি যোগাযোগ সেবা সম্প্রসারণে সহায়তা করবে উপগ্রহটি।