রবি ঠাকুরের ১৫৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রঙিন সাজে সজ্জিত হচ্ছে কুঠি বাড়ি

564
18

নিজস্ব প্রতিবেদক

আর মাত্র দুই দিন বাকি, তার পরেই হাজারো কবি ভক্তের পদচারণায় মুখরিত থাকবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছাড়ি বাড়ি (কুঠি বাড়ি) প্রাঙ্গণ সহ সমস্ত শাহজাদপুর। আগামী ২৫ বৈশাখ (৮মে) মঙ্গলবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৭তম জন্মবার্ষিকী । এর মধ্যেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৭তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাছারি বাড়ীকে ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক সাজ সজ্জা।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আগামী ২৫ও ২৬ বৈশাখ (৮ ও ৯ মে) দুইদিন ব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পালিত হবে ১৫৭তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যের নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত শাহজাদপুর কাছারি বাড়ী। বিশ্বকবির নানা স্মৃতি জড়িয়ে আছে শাহজাদপুরের এই কাছারি বাড়ীকে ঘিরে। আর তাই প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে রবীন্দ্র কাছারি বাড়ীতে আগমন ঘটে পর্যটকদের।

কলকাতার বিখ্যাত জোড়া সাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্ম নেওয়া এই কবি ৩০ বছর বয়সে বিলেতে লেখাপড়া করে (১৮৯০-৯৬) সালে জমিদারীর তদারকির জন্য ছায়াছন্ন খালবিলে ভরা পূর্ব বাংলার অনেকাংশ শিক্ষা সভ্যতা বিবর্জিত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আসেন। তিনি সাধারণত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ হয়ে নৌকাযোগে শাহজাদপুর ও নওগাঁর পতিসরে আসতেন। এর পূর্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা দ্বারকানাথ ঠাকুর নাটোরের রাণী ভবানীর নিকট থেকে তের টাকা দশ আনায় শাহজাদপুরের জমিদারী কিনে নেন।

আর এই জমিদারী দেখাশুনার জন্যই ১৮৯০-৯৬ সাল পর্যন্ত শাহজাদপুরে নিয়মিত ভাবে আসা যাওয়ার পাশপাশি সাময়িক বসবাস করেছেন। এর পূর্বে রবীন্দ্র কাছারি বাড়ীর ভবন দুটি ছিল ইংরেজ নীলকর বাবুদের। নীলকররা ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত লাল বর্ণের দুটি দ্বিতল ভবন তৈরী করেন। নীলকর বাবুদের অত্যাচার নির্যাতনের স্বাক্ষী কাছারি বাড়ীর পশ্চিমের ভবনটিতে কখনও যাননি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর কাছারি বাড়ীর পূর্ব আঙ্গিনায় দ্বিতল ভবনটি বর্তমানে রবীন্দ্র স্মৃতি যাদুঘর হিসেবে পরিচিত। কবি জীবনের নানা স্মৃতি আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে সংরক্ষিত আছে এই জাদুঘরে।

শাহজাদপুরে অবস্থানকালিন সময়ে কবি এর প্রকৃতি, পরিবেশ, ঘটনা প্রবাহ নিয়ে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, গান রচনা করেছেন যা রবীন্দ্র সাহিত্য ভান্ডার প্রমান করে। শাহজাদপুরে বসে তিনি “সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী, পঞ্চভূতের ডায়েরী, ছিন্নপত্র, সমাপ্তি, তত্ত্ব ও সৌন্দর্য্য, মানসী, অসময়, শেষ কথার মতো উলে¬খযোগ্য গ্রন্থ্য রচনা করেছেন। যদিও বিশ্ব কবি শিলাইদহ ও পতিসরের চেয়ে শাহজাদপুরে কম সময় অবস্থান করেছেন তবুও শাহজাদপুরের যমুনা, বড়াল, হুরাসাগর, করতোয়া, ইছামতি নদী রবীন্দ্র সাহিত্যের বিশাল স্থান দখল করে আছে।

এখানে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ব্যবহৃত খাট, পালকি, খরম জুতা, চশমা, তোষক, চেয়ার , পানির ট্যাপ, টেবিল , আলনা, ড্রেসিং টেবিল, থালা, বাসন, বদনা সহ নানা সামগ্রী। ১৯৬৯ সালে এই কাছারি বাড়ীকে পরিছন্ন করে সরকার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় এনে সংরক্ষনের উদ্দ্যোগ নেয়। এবং ১৯৯৯ সালে কাছাড়ি বাড়ীর পশ্চিম আঙ্গিনায় ৫০০ আসন বিশিষ্ট উত্তর বঙ্গের সবচেয়ে নান্দনিক অডিটরিয়াম নির্মাণ করে। প্রতি বছর ২৫,২৬,২৭ বৈশাখ কবির জন্মবার্ষিকী সরকারীভাবে উদযাপন করা হলেও এবছর একদিন কমিয়ে দুইদিন করা হয়েছে। এর ফলে কবির ভক্ত অনুরাগীরা অনেকটাই হতাশ।

এব্যাপারে নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমুল হুসাইন খাঁন মুঠোফোনে জানান, দুইদিন ব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আয়োজক সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন। তাই আমার পক্ষে বলা সম্ভব না কি কারণে দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতি বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২৫, ২৬ ও ২৭ বৈশাখ তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালার পাশাপাশি ৫দিন ব্যাপী বসে মেলা। এসময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কবি ভক্তরা ভীড় করে কবির কাছারি বাড়ীতে।

বর্তমানে কাছারি বাড়ীটি আধুনিকতার আবহে বাহারী গাছ ও ফুলের সমারোহে সুসজ্জিত করার ফলে পর্যটনদের দারুন ভাবে আকর্ষীত করে এবং শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাছারি বাড়ীকে ঘিরে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ আন্দোলন ও দাবীর মুখে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ স্থাপিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ঐতিহাসিক ১৭ এপ্রিলে শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের নব নির্মিত একটি ভবনে অস্থায়ীভাবে ক্লাস শুরু হয়েছে। অচিরেই নির্দিষ্ট স্থানে নির্মাণ শুরু হবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ এর দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস।