বেড়েছে স্বাস্থ্যসেবার মান, বাড়ছে রোগীর সংখ্যা

0
3
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, গৌরীপুর

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

নানা সংকট ও প্রতিবন্ধকতার কারনে বিগত সময়ে প্রাথমিক সমস্যা নিয়ে আসা রোগীকে রেফার্ড করা হতো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেই দিন আর নেই। এখন এপেন্ডিসাইটিস, সিজারিয়ানসহ নানা জটিল অপারেশন হচ্ছে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বিগত চল্লিশ বছরে যা সম্ভব হয়নি যোগদানের আট মাসের মধ্যে অপারেশন থিয়েটার চালু করে চমক দেখিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ ইকবাল আহমেদ নাসের। শুধু অপারশেন থিয়েটার নয় জরুরী বিভাগ, ইনডোর ও আউটডোরে স্বাস্থ্যসেবার পরিধি দ্রুত সময়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি হাসপাতালের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। এদিকে কাঙ্খিত সেবা পাওয়ায় এ হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

১৯৮৩ সনে জমিদার ডি.কে লাহিড়ীর বাড়িতে (বর্তমানে এসিল্যান্ড অফিস) জোড়াতালি দিয়ে কোনমতে চলছিল এ হাসপাতালের কার্যক্রম। ১৯৮৮ সনে সাবেক স্বাস্থ্য উপ-মন্ত্রী মরহুম নুরুল আমিন খান পাঠানের হস্তক্ষেপে এ হাসপাতালটি ৩১ শয্যায় উন্নীত করে পৌর শহরের ভালুকা এলাকায় স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মরহুম ডাঃ ক্যাপ্টেন (অবঃ) মুজিবুর রহমান ফকিরের হস্তক্ষেপে ২০১৬ সনে এটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও ৩১ শয্যার জনবল ও উপকরণ দিয়ে চলছিল এ হাসপাতালের কার্যক্রম। হাসপাতালে নানা সংকট ও প্রতিবন্ধকতার কারনে কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। ফলে চিকিৎসা সেবা গ্রহনের ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালের প্রতি আস্থা ছিলনা স্থানীয় লোকজনের। অবশেষে চল্লিশ বছর পর স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি এ হাসপাতালের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে- ২০২২ সনের ২৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ নাসের যোগদানের পর থেকে এ হাসপাতালে সেবার পরিধি দ্রুত বাড়তে থাকে। একযুগের বেশি সময় ধরে বিকল এক্সরে মেশিনসহ সকল অচল যন্ত্রপাতি সচল করা হয়েছে। গত বছর নভেম্বর মাসে সফল সিজারিয়ানের মধ্য দিয়ে এ হাসপাতালে অপারশেন থিয়েটারের যাত্রা শুরু হয়। এতে সপ্তাহে নিয়মিত দু’দিন গাইনী ও দু’দিন সার্জারী অপারেশন হয়ে থাকে। চার মাস ধরে হাসপাতালে নিয়মিত ইসিজি পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্যাথলজি বিভাগে বর্তমানে ২৪টি পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়া হয়ে থাকে। স্থাপন করা হয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট। সি.সি ক্যামেরার মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে। বহিঃ বিভাগে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও বিনামুল্যে ঔষধ বিতরণ করা হয়। বহিঃ বিভাগে এখন প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২শ রোগী আসেন স্বাস্থ্যসেবা নিতে। জরুরী বিভাগে ২৪ ঘন্টাই ডাক্তার থাকেন। এখানে প্রতিদিন দেড়শ থেকে ২শ রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। এছাড়া ইনডোরে বেডের তুলনায় প্রতিদিন ১১০% থেকে ১২০% রোগী ভর্তি হন। জরায়ূমুখ ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে এখন প্রতিদিন পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় এ হাসপাতালটি গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে স্বাস্থ্যসেবার মান সূচকে জেলা পর্যায়ে প্রথম ও বিভাগীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে।
স্থানীয় মাহমুদুুল হাসান মাসুদ জানান- ডাঃ ইকবাল আহমেদ নাসের একজন দায়িত্বশীল স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। যোগদানের পর থেকে তিনি এ হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় চল্লিশ বছর পর এ হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার চালু হয়েছে। এখানে বর্তমানে সিজারিয়ানসহ অন্যান্য জটিল অপারেশন হচ্ছে। হাসপাতালেই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মান সম্মত কাঙ্খিত সেবা পেয়ে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ এখন খুবই খুশি।

স্থানীয় পরশমনি জানান- গৌরীপুর সরকারি হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার চালু হওয়ায় সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। বর্তমানে এখানে বিনামুল্যে সিজারিয়ানসহ বিভিন্ন অপারেশন করাতে পারছেন রোগীরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ ইকবাল আহমেদ নাসের জানান- হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধিকল্পে সকল অচল যন্ত্রপাতি সচল করা হয়েছে। বর্তমানে স্বল্পমুল্যে এখানে ইসিজি পরীক্ষা করাতে পারছেন মানুষ। প্যাথলজি বিভাগ আধুনিকভাবে সাজানো হয়েছে। আধুনিক ডিজিটাল এক্সরে মেশিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন চালু, হাসপাতালের মূল গেইট নির্মাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরনে আনসার সদস্য নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। তিনি বলেন- সহযোগিতা ছাড়া একার পক্ষে হাসপাতালের মানুষের কাঙ্খিত সেবার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই মান-সম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকল্পে জনপ্রতিনিধিসহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এতে স্বাস্থ্য সেবাদানকারী কর্মীরা আরও উৎসাহিত হবে।