ভারত সফরের মধ্যদিয়ে দু’দেশের বিদ্যমান সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়েছে: সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

4
17

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (বুধবার) বলেছেন, তাঁর সাম্প্রতিক ভারত সফরের মধ্যদিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এই সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে। শান্তিনিকেতনে স্থাপিত বাংলাদেশ ভবন উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক বন্ধনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন। শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে গত ২৫ ও ২৬-এ মে পশ্চিমবঙ্গ সফর করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর একান্ত বৈঠক হয়। এ সময় উভয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গেও তাঁর বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে স্থাপিত বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন। একইসঙ্গে তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান আসানসোলে অবস্থিত ‘কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়’ জাতীয় কবির ১১৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ সমাবর্তনে তাঁকে ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে সেখানে উপস্থিত হয়ে সম্মাননা গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন উদ্বোধন শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি যৌথভাবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর উদ্বোধন করেন। এ সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা এ সময় সেখানে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের ইতিবৃত্ত তুলে ধরে বলেন, কবিগুরুর শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয় ২০১০ সালে তাঁর ভারত সফরের সময়। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর বাংলাদেশ সফরকালে ঘোষিত যৌথ ইশতেহারে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ ভবন’ নির্মাণের কথা উল্লেখ করা হয়।

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় এ বিষয়ে ঘোষণা প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্থাপত্য অধিদপ্তর যৌথভাবে দৃষ্টিনন্দন এই ভবনটি নির্মাণ করেছে।

তিনি বলেন, ভবনটির নির্মাণে প্রায় ২৫ কোটি ভারতীয় রুপি ব্যয় হয়েছে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর রক্ষণাবেক্ষণ এবং সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে ১০ কোটি ভারতীয় রুপির একটি স্থায়ী তহবিল গঠন করা হবে। এই তহবিলের অর্জিত লভ্যাংশ হতে প্রতিবছর বাংলাদেশের দশজন শিক্ষার্থীকে এম.ফিল ও পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য ফেলোশিপ প্রদান করা হবে।

তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক বর্তমানে ‘সোনালী অধ্যায়’ অতিক্রম করছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণের জন্য বাংলাদেশের জনগণকে সাধুবাদ জানান। ভবিষ্যতে উভয় দেশের মধ্যে মহাকাশ প্রযুক্তির উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নত দেশ হিসেবে পরিণত হওয়ার আকাক্সক্ষায় ভারত অংশীদার হিসেবে পাশে থাকবে এবং সব ধরণের সহযোগিতা করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এর আগে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার একান্ত বৈঠক হয়। এ সময় আমরা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।’

প্রধানমন্ত্রী বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের আসানসোল সফরের উল্লেখ করে বলেন, ২৬-এ মে পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে অবস্থিত কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি.লিট) ডিগ্রি গ্রহণ করেন এবং সমগ্র বাঙালি জাতির উদ্দেশ্যে এটি উৎসর্গ করেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় নজরুলকে জাতির পিতার স্বাধীন দেশে নিয়ে আসাসহ নাগরিকত্ব এবং জাতীয় কবির মর্যাদা প্রদানের উদ্যোগ তুলে ধরেন। বাংলাদেশের রনসঙ্গীত ‘চল চল চল-যেমন কবির লেখা তেমনি আমাদের অমিত প্রেরণার উৎস জয়বাংলা শ্লোগানটি পর্যন্ত নজরুলের কবিতর পংক্তিমালা উৎসারিত বলেন, প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। এরপর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে নির্বাচিত লোকসভা ও বিধানসভার কয়েকজন সদস্য আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেই রাতেই ভারতে তাঁর দু’দিনের সরকারী সফর শেষে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।