এইচএসসির প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানির ঘটনায় নড়াইলে তোলপাড় সৃষ্টি!

0
19

স্টাফ রিপোর্টার

এইচএসসির প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানির ঘটনায় নড়াইলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এ প্রশ্নের ৪ জন মডারেটরের মধ্যে দু’জন মডারেটর নড়াইলের ২টি কলেজের শিক্ষক। তারা হলেন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দীন শাওন ও নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ। মডারেটরদের অপর দু’জন হলেন সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ শফিকুর রহমান এবং কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম। আর সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে প্রশ্ন তৈরি করা শিক্ষক হলেন- ঝিনাইদহের মহেশপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল।

এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষার প্রশ্নে ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে উঠা উসকানির অভিযোগ তদন্তে যশোর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কেএম রব্বানীকে তদন্ত কমিটির প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ও উপ-কলেজ পরিদর্শককে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠাবে যশোর শিক্ষা বোর্ড। মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীব এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্ন যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মডারেট করা হয়েছিল।

এ কারণে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।’ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হবে। পাশাপাশি অপরাধের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে শো-কজ করা হবে।’

রোববার (৬ নভেম্বর) সারাদেশে এইচএসসি বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রশ্নপত্রের ১১ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিস বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে। আব্দুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’

এ বিষয়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকার বলেন, ‘বিষয়টির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এদিকে, প্রশ্নপত্রে ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয় আসাকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, আমাদের সুস্পষ্ট নির্দেশিকা দেয়া থাকে প্রশ্ন তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই যেন সাম্প্রদায়িক কোনোকিছু না থাকে। এটা খুবই দুঃখজনক যে, কোনো একজন প্রশ্নকর্তা হয়তো এ প্রশ্নটি করেছেন, যিনি মডারেট করেছেন তার দৃষ্টিও হয়তো কোনো কারণে এড়িয়ে গেছে। তিনিও হয়তো স্বাভাবিকভাবে বিষয়টি নিয়েছেন। আমরা চিহ্নিত করছি কে এ প্রশ্ন তৈরি করেছেন এবং কে বা কারা মডারেট করেছেন। আমরা তাদের খুঁজে বের করে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। এদিকে নড়াইলের দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দু’জন শিক্ষক মডারেটরের দ্বায়িত্বে থাকা প্রশ্নে এ ধরনের ধর্মীয় উস্কানিমুলক বিষয় নিয়ে নানামুখি সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকে বিসিএস ক্যাডারের দু’জন মডারেটরের সমালোচনা করে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

তবে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ’র অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, বাংলা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক যিনি এ প্রশ্নপত্রে মডারেটর ছিলেন,তাকে শোকজ করা হচ্ছে। এ বিষয়টি জিবি’র সভায় উত্থাপন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া প্রশ্ন তৈরী করা শিক্ষক ও মডারেটরদের বিরূদ্ধে শিক্ষাবোর্ড তদন্ত করছেন,তারা বিষয়টি দেখছেন। সর্বোপরি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান দিবেন। সে পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্যের সাথে অপেক্ষা করতে হবে।