নড়াইলে ৭মাসে দু’জনের রহস্যজনক মৃত্যুসহ ১০জন নিহত

0
35
নড়াইল

স্টাফ রিপোর্টার

শান্তিপূর্ণ নড়াইলে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। কয়েক মাসে বেড়েছে হত্যাকান্ড ও সহিংসতা। গত দু’মাসে জেলার দুটি এলাকায় সাম্প্রদায়িক হামলাসহ জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত দু’জনের রহস্যজনক মৃত্যুসহ ১০জন নিহত হয়েছেন। সংঘটিত হয়েছে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষ ও চুরির ঘটনা। এর মধ্যে শুধু দিঘলিয়া ইউনিয়নেই দিঘলিয়া বাজার ও পাশর্^বর্তী সাহা পাড়ায় সহিংসতা ছাড়াও পৃথক ৩টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব সহিংসতাকে কেন্দ্র করে অর্ধশতাধিক বাড়ি-দোকান ভাচুর-লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন অনেকে। কয়েক’শ বাঁশ, বনজ ও ফলদ গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। জমির ফসল কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনায় কয়েক’শ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এদের অধিকাংশই এখন বাড়ি ছাড়া। সম্প্রতি চুরির ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পুলিশ বলছে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো।

সর্বশেষ রোববার (৩১জুলাই) দিঘলিয়া ইউনিয়নের নোয়াগ্রামের জাফর আলীর পূত্র মুক্তার হোসেন (৪৫) খুন হন। নিহতের পরিবার জানায়, শনিবার সন্ধ্যার দিকে মুক্তার ও তার ছেলে ইসমাইলকে বাড়ির সামনে থেকে ব্যক্তি শত্রুতার জের ধরে একই গ্রামের মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। পরদিন রোববার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু ঘটে।

৩০জুন ভোরে পুরুলিয়া ইউনিয়নের পুরুলিয়া গ্রামের জুতা-স্যান্ডেল ব্যবসায়ী কামরুল শেখকে মসজিদ কমিটি গঠন ও জমির বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষরা বাড়িতে হামলা চালিয়ে হত্যা করে। এ সময় কামরুলের ৫ভাই গুরুতর জখম হয়। এ ঘটনায় কামরুলের ভাই জাকির শেখের বাম পায়ের গোড়ালির ওপর থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে।

২২জুন দুপুরে শালনগর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের গহের বিশ্বাসের ছেলে বেকারি ব্যবসায়ী আজিজুর বিশ্বাসকে (৪৫) স্থানীয় প্রতিপক্ষরা গ্রাম্য বিরোধের জের ধরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে।
১৩জুন বিকেলে প্রকাশ্যে জমির বিরোধের জের ধরে দিঘলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তালবাড়িয়া গ্রামের বকু মোল্লার ছেলে রেজাউল মোল্লাকে ৫০) স্থানীয় প্রতিপক্ষরা খুন করে।

৩০মে সন্ধ্যার পর কোটাকোল ইউনিয়নের তেলকাড়া গ্রামের পেতা শেখের ছেলে ইউনিয়ন আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম শেখকে(৫৫) আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রতিপক্ষরা হত্যা করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেলকাড়া গ্রামের আসামি পক্ষের এক মাতব্বর অভিযোগে বলেন, এ ঘটনার পর বাদি পক্ষ তাদের ২৫টি পরিবারের ৩০টি বাড়ি ভাংচুর ও বেশ কয়েকটি বাড়ি লুটপাট, ঝাড়ের কয়েক’শ বাঁশ ও গাছ কেটে নিয়ে গেছে। এখন জমির ফসলও কেটে নিয়ে যাচ্ছে। অর্ধশত নারী-পুরুষ বাড়ি ছাড়া।

তবে এ ব্যাপারে কোটাকোল ইউপি চেয়ারম্যান হাসাল আল মাহমুদ বলেন, ঘটনার পর উত্তেজনার বশে কিছু ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে কিছু আসামি ছাড়া সবাই বাড়িতে বলে জানান।

১৮এপ্রিল নড়াইল পৌরসভার ভাটিয়া এলাকার চা বিক্রেতা ইমাম হাসান রাজুকে(৪০) ৫শ টাকা চুরির অভিযোগে একই এলাকার জুয়েল শেখ (৪০) কুপিয়ে হত্যা করে।

১৪এপ্রিল রাতে দুবৃত্তরা দিঘলিয়া ইউনিয়নের কুমড়ি গ্রামের বদির খানের ছেলে সোহেল খানকে (৪০) পার্শ্ববর্তী পূর্বদিঘলিয়া গ্রামে শ^শুরবাড়ি থেকে কুপিয়ে হত্যা করে।

স্থানীয় দু’অপহরণকারীর দাবীকৃত ৫ লাখ টাকা না দেওয়ায় ১৫মার্চ মাইজপাড়া ইউনিয়নের বোড়ামারা গ্রামের পোলট্রি ব্যবসায়ী ওবায়দুর রহমানের পূত্র ৫ম শ্রেণির ছাত্র শিশু আরাফাতকে হত্যা করে।

১মার্চ পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের চর-বল্লারহাট এলাকায় আঠারোবাঁকি নদীর পাশ থেকে অজ্ঞাত নারীর গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৭মার্চ বিছালী ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের দীপেন বিশ্বাসের ছেলে শান্তি বিশ্বাসের মরদেহ নিখোঁজের ৩দিন পর পার্শ্ববর্তী বড়খোলা গ্রামের একটি পুকুর পাড় থেকে উদ্ধার করা হয়।

এদিকে ১৮জুন মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)কে অবমাননাকারী ভারতের বহিস্কৃত বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্র এর ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে কলেজ ক্যাম্পাসে সহিংস ঘটনা ঘটে। উত্তেজিত ছাত্র ও জনতা পুলিশের সামনে ৩শিক্ষকের ৩টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় ও কলেজের শিক্ষক শ্যামল ঘোষকে মারধর করে এবং কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে পুলিশের সামনে জুতার মালা পরিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেয়। এর প্রায় এক মাস পর ১৫জুলাই দিঘলিয়া ইউনিয়নের সাহা পাড়ায় এক কলেজ ছাত্র ফেসবকে মহানবী (সাঃ)কে নিয়ে কটুক্তি করে পোষ্ট দেওয়ার অভিযোগে বিক্ষুদ্ধ লোকজন সন্ধ্যার পর দিঘলিয়া বাজারের সনাতন ধর্মের ৬টি দোকান, পার্শ্ববর্তী সাহা পাড়ার ৫টি বাড়ি ও ৪টি মন্দির ভাংচুর ও লুটপাট করে। এর মধ্যে সন্ত্রাসীরা আখড়াবাড়ি মন্দির ও গোবিন্দ সাহার দু’কক্ষ বিশিষ্ট একটি আধা পাকা বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ৪জন আহত হয়।

এছাড়া ১২ফেব্রুয়ারী নোয়াগ্রাম ইউয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামের তায়জুল ইসলামকে (৪৬) স্থানীয় প্রতিপক্ষরা কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। ১২ জুলাই নড়াগাতি থানার যোগানিয়া বাসষ্টান্ডের পাশের্^ ইনজাহের মোল্যার বসতবাড়ি ও বসতভিটা দখলের উদ্দেশ্যে একই এলাকার ইছাবুল ও তার লোকজন হামলা চালিয়ে ইনজাহারের পরিবারের ৫ নারীসহ ৭জনকে আহত করে এবং ১২টি বড়ো আম, জাম ও লিচু গাছ কেটে নিয়ে যায়। ২২ জুলাই রাতে দুবৃত্তরা চাচুড়ী ইউনিয়নের সুমেরুখোলা গ্রামে একটি ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে ৩ লক্ষাধিক টাকার মাছ মেরে ফেলে। ২৮জুলাই রাতে দুবৃত্তরা কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া গ্রামের বিপুল চক্রবর্ত্তী, বিশ^নাথ চক্রবর্ত্তী ও নিশিকান্ত সাহার বাড়ির পারিবারিক মন্দিরের তালা কেটে ১০-১২ ইঞ্চি সাইজের ১২টি তামা, কাঁসা, পিতল ও পাথরের বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তিসহ কাঁসা ও পিতলের বেশ কিছু তৈজসপত্র নিয়ে গেছে। এর কয়েকদিন আগে পার্শ্ব র্তী কদমতলা বাজারে ২টি মুদি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে।

এসব সহিংসতা প্রসঙ্গে নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, নড়াইলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারি-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বরঞ্চ আমি নড়াইলে আসার পর এসব সহিংস ঘটনা কমেছে। তিনি নড়াইলের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে মনে করেন।