করোনা পরিস্থিতিতে নড়াইলের ৩৫টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ

29
19

স্টাফ রিপোর্টার

করোনা পরিস্থিতিতে নড়াইলের ৩৫টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রশিক্ষক, শিল্পী, বাদক এবং নাট্য কর্মীরা ভালো নেই। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ঘরভাড়া দিতে পারছে না। ২৫টি স্কুলে সংগীতের বিভিন্ন শাখার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রশিক্ষকদের জোড়াতালি দিয়ে চলছে সংসার। অনেকে পেশাও ছেড়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। এমনই একজন সন্তু বৈরা’গী। তিনি নড়াইলের মূর্ছনা সংগীত নিকেতনে ১০ বছর ধরে তবলার প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। সম্প্রতি ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন বাসা ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তবলা শিখিয়েছেন। করোনা সংকট শুরুর পর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নড়াইলে এসে সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে এখন তিনি পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবছেন। তিনি দুঃখ করে বলেন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত মানুষ আবার তাদের কর্মে ফিরেছেন। ব্যতিক্রম শুধু আমাদের ক্ষেত্রে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নড়াইল জেলায় সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে ৩৫টির মতো। এর মধ্যে সংগীত কণ্ঠ, যন্ত্র সংগীত তবলা, নৃত্য, চিত্রাংকন, কবিতা আবৃত্তি ও গীটার শেখানোর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে ২৫টির মতো। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষক রয়েছেন শতাধিক এবং শিল্পী, বাদক এবং নাট্য কর্মী সংগঠকের সংখ্যা প্রায় ৩শ। এছাড়াও জেলায় আরও দু’শতাধিক জারি গান কবি গান, কীর্ত্তন ও বাউল শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক চিত্রশিল্পী রয়েছেন। করোনাকালীন সংক’টের প্রথম দিকে এসব পরিবারের কেউ কেউ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দু’একবার খাদ্য সহায়তা পেলেও এখন আর কেউ খোঁজ-খবর নিচ্ছে না।

সংগীতের বিভিন্ন শাখার একাধিক প্রশিক্ষক এবং নাট্য কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গণজারণ মঞ্চ ও জ*ঙ্গিবাদ বিরো*ধী আ*ন্দোলন, নড়াইল মুক্ত দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে নিজেদের সর্বস্ব ঢেলে দেই। পরম মমতায় ছেলেমেয়েদের সংগীত, নৃত্য, ছবি আঁকা, কবিতা আবৃত্তি ইত্যাদি শেখালেও এখন আর কেউ খোঁজ নেয় না। আমাদের অনেকেরই প্রশিক্ষণের আয়ের ওপর সংসার চলে। এখন এই বি’পদের সময় তেমন কেউ খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না।

মূর্ছনা সংগীত নিকেতনের সভাপতি শামীমূল ইসলাম টুলু বলেন, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর নিজস্ব কোনো ভবন বা ঘর নাই। প্রত্যেক সংগঠনের ঘর ভাড়া নিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা বেতন ও সদস্য চাঁদা বা ভর্তুকি না দেওয়ায় প্রত্যেকটি সংগঠনের কমপক্ষে ৫ মাস ঘর ভাড়া বকেয়া পড়েছে। তারপরও মূর্ছনা অন লাইন ক্লাস কার্যক্রম চালু করেছে বলে জানান।

নড়াইল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক চিত্রা থিয়েটারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম লিটু জানান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং শিল্পকলা একাডেমী থেকে যেসব অ’সচ্ছল শিল্পী অনুদান পাচ্ছেন তাদের অনেকেরই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দেলনে তেমন কোনো ভূমিকা নেই। এসব অনুদানে দাবিদার প্রকৃত অনেক শিল্পী অনুদান থেকে ব*ঞ্চিত রয়েছেন। শিল্পীদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে এসব বিষয় দেখা উচিত।

এ ব্যাপারে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক মলয় কুন্ডুু বলেন, জেলায় অনেক জারি ও বাউল শিল্পী, কবি সাহিত্যিক চিত্রশিল্পী অস*হায়ভাবে দিন কা*টাচ্ছেন। করোনাকালে প্রণোদনা হিসেবে এ পর্যন্ত ৫০জন দু*স্থ অ*সহায় সংগীত শিল্পী, কবি ও নাট্য কর্মীকে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। পরে আরও ৪০জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে এ বছর জেলার অ*সচ্ছল ৬৯জন কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীকে ১০ লাখ ৬২ হাজার টাকা এবং ২৩টি সংস্কৃতিক সংগঠনের জন্য ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অ*সচ্ছল শিল্পীদের তালিকা সঠিকভাবে করা শুরু হয়েছে বলে জানান।