নড়াইলে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দেড়’শ কৃষকের জমিতে ঘের কে*টে মাছ চাষের অভিযোগ!

0
380

স্টাফ রিপোর্টার

নড়াইলের কালিয়ায় এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি টাকায় ব্যক্তির জমিতে রাস্তা নির্মাণের নামে ঘের কে*টে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে। এখন চেয়ারম্যানের ছাড়া মাছ বিলে প্রবেশ করে প্রায় ৫০ একর জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং কৃষকের চাষকৃত আমন ধানের গাছ খেয়ে ফেলছে। তবে এর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার পেড়লি ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জারজিদ মোল্যা গত তিন মাস পূর্বে এলজিএসপি এবং কর্মসৃজন ৩টি প্রকল্পের আওতায় কদমতলা রমজান মেম্বরের বাড়ি থেকে আশরাফ মাওলানার বাড়ি আবার সেখান থেকে কদমতলা বিল অভিমুখী এবং কদমতলা হিন্দু পাড়ার ডোব থেকে চর জামরিলডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিঃ মিটার কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করেন। কৃষকের উৎপাদিত ফসল আনা-নেয়া,সেচ সুবিধা এবং যোগাযোগ বৃদ্ধির কথা বলে কৃষকের নিজস্ব জায়গার ওপর দিয়ে এ রাস্তা নির্মাণ করা হয়। রাস্তা নির্মানের সময় রাস্তার পূর্ব পাড় দিয়ে টানা দেড় কিঃমিটার লম্বা সৃষ্ট গর্ত/খালের সৃষ্টি হয়। গত দেড় মাস পূর্বে চেয়ারম্যান এ খালে প্রায় দেড়’শ মন হাফ কেজি ওজনের গ্রাস কার্প জাতীয় মাছ ছেড়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থরা অভিযোগে জানিয়েছেন, বর্তমান বর্ষা মৌসুমে খালের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খালের মাছ ভেসে পাশ্ববর্তী প্রায় দেড়’শ কৃষকের ৫০ একর ফসলি জমিতে ছড়িয়ে পড়ে চাষকৃত আমন ধানের গাছ খেয়ে ফেলছে। উল্লেখ্য, নতুন এ রাস্তা নির্মাণের ফলে বিলের এসব জমির পানি বের হবার সুযোগ নেই। এই সুযোগ কাজি লাগিয়ে চেয়ারম্যান মাছ ছেড়েছে। এখানকার ৭৫ভাগ জমিই সাধারন খেটে খাওয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের। এলাকার মানুষ এ নিয়ে প্রতিবাদ করার সাহসটুকু পাচ্ছে না বরং কেউ যাতে বাঁধা দিতে না পারে সেজন্য এ জলাশয়ে লোক দিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি স্থানীয় এক ব্যক্তি একটি মাছ ধরলে তাকে মারধরের চেষ্টা করলে সে চেয়ারম্যানের কাছে মাপ চেয়ে নিজেকে রক্ষা করে।

সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে ভয়ে কেউ মুখ খোলেনি। ক্ষতিগ্রস্থরা শুধু বলেছেন, “আইছেন, দেহে যান। চিয়ারমেনের সাথে কতা বলেন। তার বিরুদ্ধে কতা বললি আমাগে জান (জীবন) থাকপে নানে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ইউপি মেম্বর জানান, চেয়ারম্যান উদ্যেশ্যমূলকভাবে বিলের মধ্যে রাস্তা নির্মাণের নামে ঘের কেটেছে। এ নিয়ে কেউ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষতিগ্রস্থ এক ব্যক্তি জানান, এখানে আনুমানিক ১শ বিঘা জমির ধান মাছে খেয়ে ফেলেছে তার পৈত্রিক প্রায় ৪ বিঘা জমির ধান রয়েছে। চেয়ারম্যান আমাদের ডেকে কিছু শোনেনি বা কিছু বলেনি। সে তার তার ইচ্ছা মতো এখানে মাছের চাষ করছে।

জানা গেছে, চেয়ারম্যান জারজিদ মোল্যা পেড়লি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বদরুল ইসলাম এবং কদমতলা গ্রামের শুকুর হ*ত্যা, গত দু’ তিন বছর পূর্বে নড়াইলের দু’ সাংবাদিককে পি*টিয়ে গুরুতর আহত করাসহ বিভিন্ন স*ন্ত্রাসী মামলার আসামি। এ ব্যাপারে পেড়লি ইউনিয়নের গত বারের চেয়ারম্যান আনিছুল ইসলাম বাবু মুখ খুলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

অভিযুক্ত পেড়লি ইউপি চেয়ারম্যান ইউয়িন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জারজিদ মোল্যা জানান, কদমতলার ডোব এলাকায় ১০-১২ বিঘা জমির আমন ধানের ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কৃষকদের ডেকে বলেছি তোমাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেব। মাছ উঠে গেলে তারা এখানে ইরি ব্লক করতে পারবে। এ রাস্তা করতে ১০ লাখ টাকার বেশী খরচ হয়েছে। সরকার থেকে পেয়েছি ৩ লাখ টাকার মতো। বাকি টাকা নিজের কাছ থেকে খরচ হয়েছে। কৃষকদের সম্মতিক্রমে এবং ভালোর জন্য এ রাস্তা করা হয়েছে।

কালিয়া থানার ওসি মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে কিছু জানিনা এবং কেউ কোনো অভিযোগও দেয়নি। কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা বলেন, এ ব্যাপারে তার জানা নেই। তবে কেউ যদি অভিযোগ করে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।