১৩০তম গ্রাম্য বিরোধ মীমাংসা করলেন নড়াইলের পুলিশ সুপার

1
56

স্টাফ রিপোর্টার

১৩০তম গ্রাম্য বিরোধ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত মীমাংসা করেছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার)। শুক্রবার (১ মার্চ) বিকেলে নড়াইল সদর উপজেলার শড়াতলা চাতাল চত্বরে এই গ্রামের দুইপক্ষের মধ্যে দীর্ঘ আট বছরের বিরোধ মীমাংসা করেন তিনি।

এ সময় পুলিশ সুপার বলেন, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সুপার হিসেবে নড়াইলে যোগদানের পর গ্রামে গ্রামে, পাড়া-মহল্লায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেলে ১৩০তম গ্রাম্য বিরোধ মীমাংসা করা হলো। এর আগে লোহাগড়া উপজেলার আমাদা, পারমল্লিকপুর, সরুশুনা, বাড়িভাঙ্গা খাল, লাহুড়িয়া, কোটাকোল, কালিয়া উপজেলার কলাবাড়িয়া, যাদবপুর, রঘুনাথপুর, সদরের চৌগাছা, হোগলাডাঙ্গার বিরোধসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের ১২৯টি বিরোধ মীমাংসা করেছি।

পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, মাদক বেচাকেনা ও গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শড়াতলা গ্রামের জামাল ফকির ও রবি মোল্যার লোকজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলে আসছিল। এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে একাধিকবার দ্বন্দ্ব ও বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। দ্বন্দ্বের কারণে অনেকে পঙ্গু হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন।

শড়াতলা গ্রামের একপক্ষের মাতবর জামাল ফকির বলেন, আমরা আর মারামারি করতে চাই না। গ্রামে শান্তি বজায় রাখব। অপরপক্ষের মাতবর রবি মোল্যা বলেন, আজ (১ মার্চ) থেকে সুষ্ঠু-সুন্দর ভাবে সবাই মিলে গ্রামে বসবাস করতে চাই। এক পর্যায়ে দুইপক্ষের মাতবর সালাম বিনিময় ও কোলাকুলি করেন সৌহার্দ ও সম্প্রীতি প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে আউড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পলাশ মোল্যা বলেন, আমার ইউনিয়নের শড়াতলা ও রামচন্দ্রপুর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত চলে আসছিল। পুলিশ সুপারের আন্তরিকতায় এ দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসান হলো।

রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন মিরা বলেন, বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ গঠনকে কেন্দ্র করে এবং গ্রামে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণে একটি পক্ষের লোকজন গত বছরের ২১ নভেম্বর আমার বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। আমার মতো এমন নৃশংতার শিকার যেন কেউ না হয়।

নড়াইল থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন পিপিএম বলেন, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণে শড়াতলা ও রামচন্দ্রপুর গ্রামে ১৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। মামলা ও আসামির সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলছিল। ৮২ জনের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। এখন থেকে এসব মামলার অবসান হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, আমার ইউনিয়নের শড়াতলা গ্রামে মাদকের প্রভাব ও গ্রাম্য দ্বন্দ্ব-সংঘাতের বিষয়টি খুবই লজ্জাজনক। সরকারের বহুমুখী উন্নয়নের ধারায় আমরা এগিয়ে যেতে চাই। আজ থেকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা পরিহার করে দুই পক্ষই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা। অন্যথায় পুলিশ যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আলী বলেন, বর্তমান পুলিশ সুপারের যথাযথ পদক্ষেপে নড়াইলে মামলার সংখ্যা কমে গেছে। ইতিবাচক এ বিষয়টি আইনজীবীরাও স্বাগত জানিয়েছেন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস বলেন, মারামারি করে মামলা ও হতাহতের পাল্লা ভারি না করে শিক্ষাদীক্ষা ও ভালো চাকুরির প্রতিযোগিতা করুন। এতে নিজেদের সামাজিক ও আর্থিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শরফুদ্দীন, চন্ডিবরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান ভূঁইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক দেবাশীষ কুন্ডু মিটুল, আউড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি রহমান চৌধুরী, আউড়িয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ইমরান মোল্যা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) জেলা সভাপতি মনিরুল ইসলাম, অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মিলন ঘোষ, শড়াতলা গ্রামের জালাল শেখ, জাহিদ হোসেন, নুরুল ইসলামসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় কাজের অবদানের জন্য গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনকে ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক’-সেবা (পিপিএম) পদক তুলে দেন। এর আগে ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজারবাগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে এ পদক গ্রহণ করেন তিনি। বিদেশিদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেয়ায় ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগের তৎকালীন ডিসি হিসেবে পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনকে পিপিএম প্রদান করা হয়।