জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কিত মুসলিম শরীফের ১০টি মূল্যবান হাদীস

51
100

হাদিস

৬৮৬৯। আব্দুরল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে অপছন্দনীয় বস্তু দ্বারা এবং জাহান্নামকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে লৌভনীয় বস্তু দ্বারা।

৬৮৭৩। আবূ বকর ইবনু আবী শায়বা ও আবূ কুরায়ব (অন্য সনদে) ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেঁছেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস তৈরী করে রেখেছি, যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি এবং যা কোন অন্তকরণ কখনো কল্পনাও করেনি। এগুলো আমি তোমদের জন্য জমা করে রেখে দিয়েছি। এসব ছাড়া আল্লাহ তোমাদেরকে যা কিছু দেখিয়েছেন এর কোন মূল্য নেই। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন, “কেউই জানেনা তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কী লূকায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পূরুস্কার স্বরুপ। ” (সূরা সাজদাঃ ১৭)।

৬৮৭৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) সাহুল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতের মধ্যে এমন একটি বৃক্ষ রয়েছে, যার ছায়ায় একজন আরোহী একশ বছর সফর করেও তা শেষ করতে পারবে না। বর্ণনাকারী আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, নূ”মান ইবনু আবূ আয়্যাশ যুরাকীর নিকট এ হাদীস আমি বর্ণনা করার পর তিনি বললেন, আমাকে আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) বলেছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতের মাঝে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যা স্ফুর্তিবাজ দ্রুতগামী অশ্বের আরোহী একশ- বছর পর্যন্ত সফর করেও অতিক্রম করতে পারবে না।

৬৮৭৮। মুহাম্মাদ ইবনু আবারে রহমান ইবনু সাহল (অন্য সনদে) হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতী লোকদেরকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে জান্নাতীগণ! তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার দরবারে উপড়ী আছি। সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। অতঃপর বলবেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট? তারা উত্তর দেবে, হে আমাদের প্রতিপালক! কেন আমরা সন্তুষ্ট হবো না? অথচ আপনি আমাদেরকে এমন জিনিস দান করেছিল যা আপনার সৃষ্টি জগতের অন্য কাউকে দান করেননি। তিনি বলবেন আমি কি তোমাদেরকে এর থেকে উত্তম জিনিস দান করব না? তারা বলবে, হে রব! এর চাইতে উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে? অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ আমি তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি নাযিল করব। এরপর তোমাদের উপর আমি আর কখনো অসন্তুষ্ট হবো না।

৬৮৮৩। আবূ উসমান সাঈদ ইবনু আবদুল জাব্বার আল বাসরী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমআয় জান্নাতী লোকেরা এতে সমবেত হবে। অতঃপর উত্তরের বায়ু প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধূলা-বালি তাদের মুখমন্ডল ও কাপড় চোপড়ে গিয়ে লাগবে। এতে তাদের সৌন্দর্য এবং গায়ের রং আরো বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর তারা নিজ পরিবারের নিকট ফিরে আসবে। এসে দেখবে, তাদের গায়ের রং এবং সৌন্দর্যও বহু বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর তাদের পরিবারের লোকেরা বলবে, আল্লাহর কসম! আমাদের নিকট হতে যাবার পর তোমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরে তারাও বলবে, আল্লাহর শপথ! তোমাদের গায়ের সৌন্দর্য আমাদের কাছ হতে যাবার পর বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে।

৬৮৮৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (অন্য সনদে) কুতায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ প্রথমে যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় দীপ্তিমান হবে। তাদের পর যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা আকাশের উদিত উজ্জ্বল তারকারাজির ন্যায় হবে। তারা পেশাব-পায়খানা করবে না, থুথু ফেলবে না এবং নাক ঝাড়বেনা। তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণের। তাদের শরীরের ঘাম হতে মিশকের ঘ্রাণ আসবে এবং তাদের আংটি হবে অগুরুর কাষ্ঠের তৈরী। তাদের স্ত্রী হবে আয়তলোচনা হুর। তাদের চরিত্র হবে একই ব্যক্তির চরিত্রের ন্যায়। আদি পিতা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আকৃতি হবে তাদের আকৃতি। ষাট হাত লম্বা হবে তাদের দেহ।

৬৮৯৪। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ কোন আহবানকারী জান্নাতী লোকদেরকে আহবান করে বলবে, এখানে সর্বদা তোমরা সুস্হ থাকবে, আর কখনো অসুস্হ হবে না। তোমরা যুবক থাকবে, কখনো আর তোমরা বৃদ্ধ হবে না। তোমরা সর্বদা সুখ-সাচ্ছন্দ্যে থাকবে, কখনো আর তোমরা কষ্ট-ক্লেশে পতিত হবে না। এ মর্মে মহা মহিম আল্লাহর বানীঃ এবং তাদেরকে সন্বোধন করে বলা হবে, তোমরা যা করতে তারই জন্য তোমাদেরকে এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী করা হয়েছে।

৬৯০২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের এ অগ্নি যা আদম সন্তানগণ প্রজ্জলিত করে তা জান্নামের অগ্নির তাপমাত্রার সত্তর ভাগের একভাগ। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলল্লাহ। আল্লাহর কসম! এ আগুন কি যথেষ্ট ছিল না? তিনি বললেনঃ সে আগুন তো এ আগুনের তুলনায় উনসত্তর গুন বেশী তাপমাত্রা সম্পন্ন। এ উনসত্তরের প্রতিটি গুন দুনিয়ার আগুনের সমমানের।

৬৯১০। মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: একদা জাহান্নাম ও জান্নাত দ্বন্দে লিপ্ত হল। জাহান্নাম বলল, অহংকারী এবং প্রভাব প্রতিপত্তি সম্পন্ন লোকেরা আমার মাঝে প্রবেশ করবে। জান্নাত বলল, আমার কি হল, মানুষের মাঝে যারা দুর্বল, নীচু স্তরের এবং অক্ষম, তারাই আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। এ কথা শুনে আল্লাহ তাআলা জান্নাতকে বললেন, তুমি আমার রহমত, আমার বান্দাদের যার প্রতি ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা করুনা বর্ষণ করব। এরপর তিনি জাহান্নামকে বললেন, তুমি আমার আযাব, আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা শাস্তি দেব। তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই থাকবে ভরপূর হিস্যা। এতদৃসত্ত্বেও জাহান্নাম পূর্ণ হবে না। তাই আল্লাহ তাআলা এতে স্বীয় পা মূবারক রাখবেন। তখন জাহান্নাম বলবে, যথেষ্ট, যথেষ্ট। এ সময়ই জাহান্নাম পূর্ণ হবে এবং জাহান্নামীদের উপর হুমড়ী খেয়ে গিয়ে পড়বে।

৬৯২১। হারুন ইবনু সাঈদ আল আইলী ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যখন জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তখন মৃত্যু কে আনা হবে এবং তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যখানে দাড় করিয়ে যবাহু করে দেয়া হবে। অতঃপর একজন ঘোষক ঘোষণা করবে, হে জান্নাতবাসীগণ! এখানে আর তোমাদের মৃত্যু নেই। অনুরুপভাবে জাহান্নামীদেরকেও বলা হবে, হে জাহান্নামীরা! আর তোমাদের মৃত্যূ নেই। এতে জান্নাতীদের খুশীর সাথে আরো খুশী বর্ধিত হবে এবং জাহান্নামীদের শোকের সাথে আরো শোক সংযোজিত হবে।