ভাসমান ঈদগাহ মাঠে নামাজ পড়বে ৩ হাজার মুসল্লি!

8
11

স্টাফ রিপোর্টার

তিনটি গ্রামের প্রায় ৩ হাজার মুসল্লি প্রতিবছর সারি সারি নৌকার উপরে বর্ষায় ঈদের নামাজে অংশ নিতো। আর তাদের ঈদের নামাজ নৌকায় পড়তে হবে না। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা অবশেষে লাঘব হলো তিনটি গ্রামের মানুষের। এবার অভিনব ভাসমান পাকা ঈদগাহ মাঠে নামাজ পড়বে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি।

এমন নতুন ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায়ের আশায় চলনবিলের উল্লাপাড়া উপজেলার তিনটি গ্রামের মানুষ। দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে তারা স্বপ্নের ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করবে। তিনটি গ্রামের মানুষের ঈদের আনন্দ এবার নতুন মাত্রা যোগ করেছে এই ভাসমান ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ আদায়কে কেন্দ্র করেই।

দু’চোখ যতদূর যায়, শুধু পানি আর পানি, পানির উপর ভাসছে গ্রামগুলো। প্রবল বর্ষায় পানির ঢেউ সজোরে আছড়ে ভেঙে ফেলতে চাইছে মানুষের ঘরবাড়িসহ সবকিছু। পানিমগ্ন এই জনপদে মানুষের চলাচলের জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। বর্ষায় চারদিকে তলিয়ে যাওয়ায় এখানকার মানুষের দুঃখের কোনো শেষ নেই। এমনকি এখানকার কবরস্থানগুলো তলিয়ে যাওয়ায় মৃত মানুষকে পর্যন্ত দাফন করা দায় হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ জনপদের মানুষকে এতদিন পবিত্র ঈদের নামাজ পড়তে হতো কবরস্থানের পাশে সারি সারি নৌকা বেঁধে তার উপর।

দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলে আসছিল চলনবিল অঞ্চলের সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের নরসিংহপাড়া, শুকলাই ও শুকলহাট গ্রামের মানুষের। গ্রামগুলোর মানুষের এ সমস্যা সমাধানে নির্মিত হয়েছে অভিনব ভাসমান দ্বিতল পাকা ঈদগাহ মাঠ। জনহিতকর এই কাজের পরিকল্পনাকারী ও উদ্যোক্তা নরসিংহপাড়ার গ্রামের কৃতী সন্তান সাহিত্যিক সাংবাদিক মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি এ গ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবি, সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মরহুম আলহাজ্ব ব্যারিস্টার রওশন আলি সাহেবের একমাত্র পুত্র।

জানা যায়, গত দু’বছর আগে ৩টি গ্রামের কয়েকশ’ লোকের সমাগমে মিলাদ মাহফিল ও মিষ্টি মুখ করে অভিনব এ ঈদগাহ মাঠের মাটিকাটা কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা হয়। এই প্রকল্পের মাটিকাটা কাজের উদ্বোধন করেন তিন গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক ৬ মুরুব্বি। এরা হলেন নরসিংহপাড়ার হাজী আহসান আলি আকন্দ, হাজি জাহের আলি আকন্দ, শুকলাই গ্রামের-হাজি বেলায়েত ফকির, সোরমান প্রামাণিক, শুকলহাট গ্রামের-মো: ইউনুস আলি প্রামাণিক ও খোরশেদ প্রামাণিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ধনি প্রামাণিক। জনহিতকর এই শুভ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, হাজী কে.এম আব্দুর রশিদ, হাজী আহসান আলী আকন্দ, মেম্বার মোঃ আয়নাল হোসেন, আবদুল কুদ্দুস, হাজী আবদুল ওয়াহেদ প্রামাণিক, মাওলানা মো: মোরশেদ আলি, আয়নাল মেম্বার প্রমুখ।

ঈদগাহ মাঠের নির্মাণ পরিকল্পনাকারী ও অন্যতম দাতা সাহিত্যিক সাংবাদিক মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম নিজ গ্রামের মানুষের এই দুরাবস্থা নিরসনের জন্য প্রায় দু’বছর বছর আগে ঈদগাহের সমস্যা মিটানোর জন্য পরিকল্পনা করেন। তার সেই পরিকল্পনার অবশেষে বাস্তবর লাভ করে পানির মধ্যে পাকা পিলারে ছাদ দেয়া নির্মিত হয় দ্বিতল ঈদগাহ মাঠ। এই ঈদগাহ নির্মাণ করা হয়েছে নরসিংহপাড়া, শুকলাই ও শুকলহাট তিন গ্রামের মাঝখানে ঈদগাহের মাঠের জন্য দান করা নিজস্ব জায়গায়। চলনবিলের ঘোরপল্লী এই ৩ গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। পানির উপর দন্ডায়মান সাইক্লোন শেল্টার আদলে তৈরি এই ঈদগাঁহে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি এক সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন।

স্থানীয় এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদগাহ নির্মাণের টাকার একটি অংশ ব্যারিস্টার রওশন-জাহান ফাউন্ডেশনের পক্ষে মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম ও তার পরিবার দিয়েছেন। এছাড়া জাহাঙ্গীর আলম তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের কাছ থেকেও অর্থ সংগ্রহ করে এক বিঘা জায়গার উপর ঈদগাহ মাঠটি নির্মানে ব্যয় হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এই ঈদগাঁহ মাঠ নির্মাণের জন্য ৩ গ্রামের মানুষের আন্তরিক সহযোগিতাও রয়েছে নিবিড়ভাবে। এ ঈদগাঁহ নির্মাণের স্থানটিকে চার কোণবিশিষ্ট করার জন্য নরসিংহপাড়া গ্রামের নিরক্ষর চাষী কুদরত আলী কুদু তার এক শতক জমিও দান করেছেন। নিজেদের দীর্ঘদিনের ঈদগাঁহ সমস্যা নিরসনে কায়িকশ্রম ও সহযোগিতার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে চলেছেন তিন গ্রামের সর্বসাধারণ এবং ঈদগাঁহ কমিটির সদস্যগণ। চলনবিল অঞ্চলের এই গ্রামে পানির মধ্যে পিলার দিয়ে ঈদের মাঠ নির্মাণ কাজটি যেমন অভিনব নির্মাণশৈলী তেমনি নতুন। পানির উপরে মসজিদ নির্মাণের কথা শোনা গেলেও ঈদগাঁহ নির্মাণের উদ্যোগ এটিই প্রথম। ইতোমধ্যে এই পানির উপর অভিনব এ ঈদগাঁহ নির্মাণের ব্যাপারে বিপুল সাড়া পড়ে গেছে। প্রতিদিন লোকজনের সমাগম হচ্ছে এ ঈদগাঁহ মাঠ দেখার জন্য। দূর দূরান্ত থেকে সাধারন মানুষ ঈদগাহ মাঠটি দেখতে আসছেন। বর্ষাকাল হওয়ায় পানির মধ্যে ভাসমান ঈদগাহ মাঠটির সৌন্দর্য্য যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে ঈদগাহ মাঠ তৈরির পরিকল্পনাকারী মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অনেক কষ্ট করে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় ঈদগাহ মাঠটি নির্মিত হয়েছে। এখন মাঠটির গম্ভুজ তৈরির কাজ চলছে। এবার এই ঈদগাহ মাঠে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবে। তিনি উল্লেখ করেন, অর্থাভাবে রংসহ সৌন্দর্য্য বর্ধন কাজ এখনও সমাপ্ত হয়নি। এ জন্য আরো প্রায় ১০ লাখ টাকার অধিক প্রয়োজন।