শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উসকানির ফোন রেকর্ড পর্যবেক্ষণ করছে পুলিশ ও গোয়েন্দা

1
10

নিউজ ডেস্ক

শুধু বিএনপি নেতারাই নয়, জামায়াত শিবিরসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সরকার বিরোধী করতে ব্যাপক তত্পরতা চালিয়েছেন। এমন অর্ধশত ব্যক্তির ফোন রেকর্ড এখন পুলিশ ও গোয়েন্দাদের হাতে। এর মধ্যে অন্তত ২৫টি ফোন রেকর্ড নিয়ে কাজ করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। বাকিগুলো নিয়ে গোয়েন্দাদের অন্য ইউনিটগুলো কাজ করছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার (ডিএমপি) আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে ধ্বংসাত্মক রূপ দেওয়ার জন্য অনেকে চেষ্টা করেছে। তথাকথিত দায়িত্বশীল অনেকের অডিও-ভিডিও রেকর্ডে পুরো চিত্র উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশ ও গোয়েন্দারা হাতে পাওয়া অডিও ও ভিডিও রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখছেন। যাদের বক্তব্যে উসকানির তথ্য মিলবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলছেন পুলিশ কমিশনার। কারা আছে এই তালিকায়? এমন প্রশ্নের জবাবে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘শুধু বিএনপি নেতারা নন, জামায়াত শিবিরসহ অনেক বুদ্ধিজীবীও আছেন এই তালিকায়। আমাদের ইউনিট ২৫ জনের অডিও নিয়ে কাজ করছে। পরে বলা যাবে কারা আসলে শিক্ষার্থীদের নিষ্পাপ আন্দোলনকে সরকার বিরোধী করতে চেষ্টা করেছেন। অহিংস আন্দোলনকে সহিংসতার দিকে নিয়ে গেছেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।’ গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ট্রাফিক সপ্তাহ-২০১৮ উপলক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার বলেন, যারা এ ধরনের ইস্যুকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, অনেককে আটক করা হয়েছে। আরো যাদের নাম আসবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে কোমলমতি শিশু-কিশোররা আমাদের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি যৌক্তিক ও ন্যায্য। আমরা তাদের চেতনাকে অন্তরে ধারণ করি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তৃতীয় দিনে স্বার্থান্বেষী মহল প্রপাগান্ডা ছড়ায়। হত্যা, ধর্ষণ ও চোখ তুলে ফেলার মতো গুজব ছড়িয়ে মিথ্যাচার করে। আন্দোলনের সময় আমরা দেখেছি, গাউসিয়া-নিউ মার্কেটে স্কুলড্রেস বানানোর হিড়িক পড়ে যায়। ভুয়া আইডি কার্ডও তৈরি হয়। ছাত্রদের ভ্যাট আন্দোলন, কোটা আন্দোলনে সহিংসতা এবং ২০১৪ সালের দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও একই সূত্রে গাঁথা বলেও জানান তিনি।

সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি-না, জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, সেদিনের ঘটনা দুঃখজনক। ওই ঘটনায় কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করলে আমরা মামলা নেবো। পাশাপাশি ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া দেশজুড়ে চলমান ট্রাফিক সপ্তাহের কারণে অনেক ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে জানিয়ে এটা আরো তিনদিন বাড়ানোর ঘোষণা দেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ট্রাফিক সপ্তাহে ট্রাফিক আইন প্রয়োগের কারণে সড়কে শৃঙ্খলায় অগ্রগতি হয়েছে। শৃঙ্খলা আরও টেকসই করতে এ অভিযান চলমান রাখা দরকার বলে মনে করছি। চলমান এ অভিযান আরও বেগবান করতে ট্রাফিক সপ্তাহ আরও তিনদিন (১২-১৪ আগষ্ট) বর্ধিত করার ঘোষণা করছি।

উল্লেখ্য, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি অডিও ভাইরাল হয়। অডিওতে আন্দোলনে অনেক মানুষকে মাঠে নামাতে বলা হয়। পরে জানা যায় অডিওটি বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে কুমিল্লার মিজানুর রহমান নওমি নামে এক কর্মীর কথোপকথনের। ওই ঘটনায় নওমিকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় নিয়ে আসে পুলিশ। যদিও বিএনপি নেতা আমির খসরু দাবি করেন এটি তার কথোপকথন নয়, বানানো অডিও। আমির খসরুর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা করেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। মামলায় উল্লেখ করা হয়, আমির খসরু দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিলেন।